চট্টগ্রামে সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের মানসম্মত আবাসন নিশ্চিত করতে নগরীর আগ্রাবাদস্থ সিজিএস কলোনিতে প্রস্তুত ২০তলা বিশিষ্ট ৯টি ভবনের ৬৮৪টি ফ্ল্যাট। প্রতিটি ভবনে আধুনিক সুযোগ–সুবিধার ৭৬টি করে ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি উদ্বোধনের পর এখন সরকারি তৃতীয়–দ্বিতীয় এবং প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা–কর্মচারীদের মাঝে এসব ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে ফ্ল্যাটের দ্বিগুণেরও বেশি আবেদন জমা পড়েছে বলে জানা গেছে।
গণপূর্ত বিভাগের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০ তলা বিশিষ্ট ৯টি ভবনের মধ্যে দুটিতে ৬৫০ বর্গফুটের ১৫২টি ফ্ল্যাট, ৪টিতে ৮৫০ বর্গফুটের ৩০৪টি ফ্ল্যাট এবং ৩টিতে এক হাজার বর্গফুটের ২২৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে। ভবনগুলোর প্রত্যেকটি ফ্লোরে রয়েছে চারটি করে ফ্ল্যাট। নগরীর কেন্দ্রস্থলে হওয়ায় এবং একই ছাদের নিচে সকল আধুনিক নাগরিক সুযোগ–সুবিধা বিদ্যমান থাকায় সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের মাঝে এসব ফ্ল্যাটের চাহিদা বেশি বলে জানা গেছে। পাশাপাশি ভবনগুলো নির্মাণে সর্বোচ্চ গুণগত মানের প্রতি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। জীবনমানের সব ধরনের সুযোগ–সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে বলেও গণপূর্ত বিভাগের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান। ফ্ল্যাটগুলো বরাদ্দ হলে চট্টগ্রামে সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের আবাসন সংকট অনেকাংশে ঘুচে যাবে।
গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ছয় দশমিক ১৬ একরজুড়ে ভবন তিনটি নির্মাণ করা হয়েছে। পুরো জায়গার মাত্র ২৫ শতাংশ ব্যবহার করা হয়েছে ভবন নির্মাণে। অবশিষ্ট ৭৫ শতাংশ ফাঁকা ও সবুজ আচ্ছাদন করা হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার বিভিন্ন ফলদ, ওষুধি, বনজ এবং সৌন্দর্যবর্ধনকারী গাছ লাগানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগ আগ্রাবাদ সার্কেল থেকে সম্প্রতি বদলি হয়ে খাগড়াছড়িতে যোগদানকৃত নির্বাহী প্রকৌশলী জহির আহমদ বলেন, চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনিতে জরাজীর্ণ ১১টি ভবন ভেঙে ৯টি বহুতল আবাসিক ভবনে সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে। একেকটি ভবনে ৭৬টি করে ফ্ল্যাট রয়েছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী জহির আহমদ বলেন, আমি থাকা অবস্থায় এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি উদ্বোধনও করেছেন। ফ্ল্যাটগুলো এখন সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের মধ্যে বরাদ্দ দেয়া হবে। অনেকগুলো আবেদন জমা পড়েছে। এগুলো বরাদ্দ দেয়ার জন্য বরাদ্দ কমিটি রয়েছে। জেলা প্রশাসক এবং আবাসন কর্তৃপক্ষ মিলে বরাদ্দ দিবেন। জমা পড়া আবেদন থেকে যাচাই–বাছাই করে যারা বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য তারা বরাদ্দ পাবেন। ৬৫০ বর্গফুট এবং ৮৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটগুলোর জন্য ৯ম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেড, ১১তম গ্রেড, ১২তম গ্রেডের (দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা) কর্মকর্তারা আবেদন করবেন। এসব তাদের মধ্যে বরাদ্দ দেয়া হবে। ১ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাটগুলোতে ৩টি বেড রুম, ড্রয়িং–ডাইনিং রয়েছে। সাথে ৩টি ব্যালকনি এবং ৩টি ওয়াশ রুমে রয়েছে। এগুলোর জন্য প্রথম শ্রেণির অফিসাররাও আবেদন করতে পারবেন।
এসব ফ্ল্যাটের মাধ্যমে চট্টগ্রামে সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের মানসম্মত আবাসন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। নগরের কেন্দ্রস্থলে হওয়ায় এসব ফ্ল্যাটের চাহিদা থাকবে বেশি। জীবনমানের সব ধরনের সুযোগ–সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এসব ভবনে ব্যবহার করা হয়েছে অত্যাধুনিক নির্মাণসামগ্রী, উন্নত ফিটিংস ও আধুনিক প্রযুক্তি। প্রতিটি ভবনের ভেতরে–বাইরে রয়েছে নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, জরুরি ফায়ার এক্সিট, সুপরিসর বারান্দা ও কমনস্পেস। খেলার মাঠ, সুইমিংপুলসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধা রাখা হয়েছে। ৩ তলা বিশিষ্ট কমিউনিটি হল, রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অফিস, সুপরিসর রাস্তা, গভীর ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও হাঁটাচলার জন্য ওয়াকওয়ের ব্যবস্থা। উন্মুক্ত স্থান, কিডস জোন, মিনি পার্ক, ল্যান্ডস্ক্যাপিংয়ের ব্যবস্থা। নিজস্ব গভীর নলকূপ ও ভূ–গর্ভস্থ জলাধার দ্বারা সুপেয় পানির ব্যবস্থা, সিকিউরিটি লাইট, সিসিটিভি দ্বারা সার্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থা, দুটি জেনারেটর, বিদ্যুৎ সাব–স্টেশন, ওয়াটার বডি ও অত্যাধুনিক ফায়ার হাইড্রেন্টের ব্যবস্থা, ৯টি ভবনে তিনটি করে মোট ২৭টি লিফট, প্রতিটি ফ্ল্যাটে পিএবিএক্স বা ইন্টারকম, সোলার প্যানেলের সংস্থাপন, সেন্ট্রাল ডাস্টবিন ও ওয়েস্ট কালেকশন পয়েন্ট, আধুনিক সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, পাম্প হাউজ ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা, জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য রেটিকুলেটেড প্রি–পেইড এলপিসি সিস্টেমের ব্যবস্থা ইত্যাদি রয়েছে।
গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৪৮২ কোটি ৯৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। ২০১৮ সালের ২৬ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি এর অনুমোদন দেয়। তিন প্যাকেজে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়।