শীতের আমেজ শুরুর পর থেকেই রাঙামাটির পর্যটন কেন্দ্রগুলো পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রের পাশাপাশি সাজেকও এখন পর্যটকে ঠাসা। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকদের আনাগোনা থাকছে সবচেয়ে বেশি।
গতকাল শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) এবং আজ শনিবার (২১ ডিসেম্বর) রাঙামাটি ও সাজেকে বিপুল পরিমাণ পর্যটক ভ্রমণ করছেন বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাঙামাটির পর্যটন আইকন ঝুলন্ত সেতু। শীতের সকাল থেকেই পর্যটকদের পদচারণায় মুখর ঝুলন্ত সেতুর পুরো এলাকা। যান্ত্রিক কোলাহল ভুলে প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটাতে হ্রদ পাহাড়ের শহরে ছুটে এসেছেন অসংখ্য পর্যটক। দলে দলে পর্যটকরা ঝুলন্ত সেতুতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ঝুলন্ত সেতুর পাটাতনে হাঁটা-চলার পাশাপাশি অনেকেই কাপ্তাই হ্রদে নৌবিহার করছেন।
শুধু রাঙামাটি শহর নয়, মেঘের রাজ্য সাজেক ভ্যালিতেও নেমেছে পর্যটকের ঢল। সকাল থেকে জিপ গাড়ি, মাহিন্দ্রায় আঁকাবাঁকা সড়ক পেরিয়ে সাজেকে ছুটে যাচ্ছেন পর্যটকরা। সাজেকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মোহিত পর্যটকরা।
সাজেক জিপ সমিতির লাইনম্যান ইয়াছিন আরাফাত জানিয়েছেন, গতকাল (শুক্রবার) সারাদিন সাজেকে দুই শতাধিক জিপ ও মাহেন্দ্র গাড়ি প্রবেশ করেছে। এছাড়া অর্ধশতাধিক মোটর সাইকেলও রয়েছে। আজও (শনিবার) সাজেকে যাওয়ার জন্য অনেক পর্যটক খাগড়াছড়ি এসে পৌঁছেছেন। সকালের স্কর্টে তারা রওনা করবেন।
কটেজ মালিক সমিতি অব সাজেকের সাংগঠনিক সম্পাদক রাহুল চাকমা জন বলেন, গতকাল (শুক্রবার) সাজেক ছিল পর্যটককে ভরপুর। সাজেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকরা ভিড় করছে। তিন হাজারের অধিক পর্যটকের সমাগম হয়েছে সাজেকে। আজও প্রায় রিসোর্ট কটেজে শতভাগ বুকিং রয়েছে।
কটেজ মালিক সমিতি অব সাজেকের তথ্যমতে, সাজেকে ১১৬টি হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ রয়েছে। রেস্তোরাঁ আছে ১৪টির বেশি। প্রতিটি হোটেল-মোটেলে পর্যটকদের ভিড় রয়েছে।
এদিকে রাঙামাটি জেলা সদরের বিভিন্ন স্পটগুলোতে পর্যটকদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ঝুলন্ত সেতু, পলওয়েল পার্ক, আরণ্যকসহ বিভিন্ন স্পটগুলো পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। এছাড়া কাপ্তাই হ্রদের স্বচ্ছ নীল জলরাশি ও পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকরা সুবলংয়ের উদ্দেশে নৌবিহারও করছে অনেকে।
ফেনি থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক উম্মে সায়মা বলেন, বাচ্চাদের পরীক্ষা শেষ তাই স্ব-পরিবারে রাঙামাটি বেড়াতে আসলাম। খুব ভালো লাগছে। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সত্যিই উপভোগ্য।
ভ্রমণের জন্য কেন রাঙামাটিকেই বেছে নিলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রাম থেকে বেড়াতে পর্যটক হামদান ভুঁইয়া বলেন, রাঙামাটি হলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এখানে আসলে লেক আর পাহাড়ের যে মিলন সেটি উপভোগ করা যায়, আর বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খাবার উপভোগেরও সুযোগ থাকে, তাই রাঙামাটি আসা।
পর্যটন নৌ-ঘাটের টোল আদায়কারী মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, এই মাসে আমাদের এখানে পর্যটকদের খুব ভালো উপস্থিতি রয়েছে। শীতের মৌসুম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরীক্ষা শেষ, সব মিলিয়ে মানুষজন রাঙামাটি ভ্রমণে আসছেন। আমরাও তাদের সর্বোচ্চ সেবা দিচ্ছি।
বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন রাঙামাটি জেলার ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, আশারূনুপ পর্যটক এসেছে রাঙামাটিতে। সাপ্তাহিক ছুটির প্রথম দিন গতকাল (শুক্রবার) ঝুলন্ত সেতুতে তিন হাজার পর্যটক এসেছে। আজও পর্যটকদের ভালো উপস্থিতি রয়েছে। পাশাপাশি হোটেল-মোটেলগুলো ৮০ভাগ বুকিং আছে। এ মাসে প্রতিদিনই ভালো পর্যটক আসছে।
রাঙামাটি শহর ও সাজেক মিলে প্রতিদিন রাঙামাটিতে ভ্রমণ করছে প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার পর্যটক।