দেশে রফতানিমুখী ৪৩টি খাতে নগদ প্রণোদনা প্রত্যাহার করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে চূড়ান্তভাবে বের হওয়ার পদক্ষেপ হিসেবে রফতানিমুখী এসব পণ্যে প্রণোদনা প্রত্যাহার করা হয়। ঘোষিত ৪৩টি পণ্যের মধ্যে অধিকাংশ পণ্য গার্মেন্ট খাতের। গতকাল এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটতে যাচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ হলে কোনো রফতানি প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা প্রদান করা যাবে না। রফতানি প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা একসঙ্গে প্রত্যাহার করা হলে রফতানি খাত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে বিবেচনায় চলতি জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন খাতে নগদ সহায়তার হার অল্প অল্প করে হ্রাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ সিদ্ধান্ত অনুসারে ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে জাহাজীকরণ করা পণ্যের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ৪৩টি খাতে রফতানি প্রণোদনা বা নগদ সহায়তার জন্য নতুন হার নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) এগ্রিমেন্ট অন সাবসিডিজ অ্যান্ড কাউন্টারভেইলিং মেজার্স (এএসসিএম) অনুসারে ৬১০৫, ৬১০৭, ৬১০৯, ৬১১০ এবং ৬২০৩—এ পাঁচ এইচএস কোডভুক্ত পণ্য রফতানি প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা-বহির্ভূত থাকবে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে টি-শার্ট, মেনজ টি-শার্ট, জার্সি, জ্যাকেট, ব্লেজার, ট্রাউজার, শর্টস প্রভৃতি।
এসব রফতানি পণ্যের মধ্যে রফতানিমুখী দেশীয় বস্ত্র খাতের শুল্ক বন্ড ও ডিউটি ড্র-ব্যাকের পরিবর্তে বিকল্প নগদ সহায়তা কমিয়ে ৪ শতাংশ থেকে করা হয়েছে ৩ শতাংশ। ইউরো অঞ্চলে বস্ত্র খাতের রফতানিকারকদের জন্য বিদ্যমান ৩ শতাংশের অতিরিক্ত বিশেষ সহায়তা ১ শতাংশ, রফতানিমুখী তৈরি পোশাক খাতের (নিট, ওভেন ও সোয়েটার) অন্তর্ভুক্ত সব ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অতিরিক্ত সুবিধা ৪ শতাংশ, নতুন পণ্য/নতুন বাজার (বস্ত্র খাত) সম্প্রসারণ সহায়তা (আমেরিকা/কানাডা/ইইউ/ইউকে/ভারত/জাপান/অস্ট্রেলিয়া ছাড়া) ৩ শতাংশ এবং তৈরি পোশাক খাতের বিশেষ নগদ সহায়তা ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে করা হয়েছে দশমিক ৫০ শতাংশ। এভাবে ফার্নিচার, প্লাস্টিক, ফার্মাসিউটিক্যাল, সিরামিকসহ মোট ৪৩টি খাতের রফতানি প্রণোদনা ও নগদ সহায়তা কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
অধিকাংশ গার্মেন্ট পণ্য থেকে রফতানি প্রণোদনা প্রত্যাহারের বিষয়টিকে আত্মঘাতী বলে অভিহিত করেছেন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান। তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমরা বৈদেশিক মুদ্রার সংকটকাল অতিক্রম করছি। এ সময়ে প্রণোদনা প্রত্যাহারের এই সিদ্ধান্তকে বলা যায় আত্মঘাতী।’
এর আগে গত বছরের আগস্টে রফতানি প্রণোদনা নিয়ে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন ৪৩টি পণ্যের বিপরীতে প্রণোদনা প্রদানের ঘোষণা জারি করা হয়। গতকালের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সেটি পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।