করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ সময় নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে রেকর্ডসংখ্যক পদ ফাঁকা রয়েছে। বর্তমানে ১৯ লাখ ১৫১টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৮১৮ জন। আর ফাঁকা আছে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৯৭৬টি পদ। অর্থাৎ মোট পদের ২৫ দশমিক ৭৮৬ শতাংশ ফাঁকা। এত বিপুল সংখ্যক পদ এর আগে কখনই ফাঁকা ছিল না।
২০২২ সালের সরকারি কর্মচারীদের একটি পরিসংখ্যান গতকাল প্রকাশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ওই পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
কর্মকর্তরা বলছেন, করোনার সময়ে লকডাউন চলাকালে সরকারি দপ্তরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় নিয়োগ প্রক্রিয়াও থমকে যায়। দফায় দফায় স্থগিত করা হয় বিভিন্ন দপ্তরে চাকরির প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার তারিখ। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিত হওয়ায় ফাঁকা পদগুলো দ্রুত পূরণ করতে দপ্তরগুলোকে কয়েক দফা তাগাদাও দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরপরেও নিয়োগ প্রক্রিয়া তেমন গতি পায়নি।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারি চাকরিতে ২০১৮ সালে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ২৪৭টি, ২০১৯ সালে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৩৩৮, ২০২০ সালে ৩ লাখ ৮০ হাজার ৯৫৫ এবং ২০২১ সালে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫টি পদ ফাঁকা ছিল।
এখন সরকারি চাকরিতে প্রথম থেকে নবম গ্রেডের (আগের প্রথম শ্রেণি) ২ লাখ ৪৪ হাজার ৯৬টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ১ লাখ ৭৯ হাজার ৫১৪ জন। ফাঁকা আছে ৬৪ হাজার ৫৮২টি পদ।
১০ থেকে ১২তম গ্রেডে (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) ২ লাখ ৯১ হাজার ১১১টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন ১ লাখ ৯৩ হাজার ৬৬৪ জন। ফাঁকা রয়েছে ৯৭ হাজার ৪৪৭টি পদ।
১৩ থেকে ১৬তম গ্রেডে (আগের তৃতীয় শ্রেণি) ৭ লাখ ৯৫ হাজার ৪০টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৬ লাখ ৩ হাজার ৪৩৩ জন। ফাঁকা আছে ১ লাখ ৯১ হাজার ৬০৭টি পদ।
অন্যদিকে ১৭ থেকে ২০তম গ্রেডে (আগের চতুর্থ শ্রেণি) ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৪৬৯টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৪ লাখ ১৫ হাজার ১০৪ জন। ফাঁকা রয়েছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩৬৫টি পদ।
আর সরকারি দপ্তরে নির্ধারিত ও অন্যান্য কাজের জন্য ১১ হাজার ৪৩৫টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কাজ করছেন ৫ হাজার ১০৩ জন। ফাঁকা রয়েছে ৬ হাজার ৩৩২টি পদ।
প্রথম থেকে ১২তম গ্রেডের গেজেটেড পদগুলোতে নিয়োগ দেয় সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। আর ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগ দেয় মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ৬ হাজার ৮২১টি এবং অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৩৩৬টি পদ ফাঁকা রয়েছে। আর বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ১৩ হাজার ৩৫৭টি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে ফাঁকা রয়েছে এক লাখ ৫৭ হাজার ৮১৯টি পদ।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারি চাকরির ফাঁকা পদ পূরণে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে তাগাদা দেওয়া হলেও অনেক সময় তারা দ্রুততার সঙ্গে কাজটি করছে না। ফলে ফাঁকা পদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কোভিডের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া অনেকটা বন্ধ থাকায় সরকারি চাকরিতে এখন সব থেকে বেশি পদ ফাঁকা রয়েছে।’
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সব সময়ই কেউ না কেউ চাকরি থেকে অবসের যাচ্ছেন। ফলে সরকারি চাকরির শতভাগ পদ কখনই পূরণ হয় না। তবে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো উদ্যোগ নিলে ফাঁকা পদের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব।’
সরকারি চাকরির ২৫ শতাংশ পদ ফাঁকা থাকা উচিত নয় বলে মনে করছেন সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান মনে। ‘সরকারকে শিগগিরই পরিকল্পনা নিয়ে ফাঁকা পদগুলো পূরণের তাগাদা দিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘কোনো কাজ যাতে ব্যাহত না হয় এজন্য সরকারি দপ্তরগুলোর জন্য নতুন নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু ওইসব পদ পূরণ করতেই যদি দীর্ঘ সময় লেগে যায় তবে তেমন সুবিধা পাওয়া যায় না। এখন ২৫ শতাংশ পদ ফাঁকা রয়েছে। ফলে সরকারি কাজকর্ম অবশ্যই ব্যাহত হচ্ছে। একজনের ওপর বেশি চাপ পড়ছে। ফলে ফাঁকা পদ দ্রুত পূরণ করতে হবে। যে পদগুলো পিএসসির পূরণ করার কথা, সে বিষয়ে তাদের বলতে হবে। যেসব পদ জেলা পর্যায় থেকে পূরণের কথা সেগুলো পূরণের জন্য তাদের বলতে হবে।’
বেকারদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে সরকারের অঙ্গীকার রয়েছে জানিয়ে শহিদ খান বলেন, ‘সরকারি চাকরির ফাঁকা পদগুলো পূরণ করলে অনেকের চাকরির সংস্থান হবে। একইসঙ্গে সরকারি দপ্তরগুলোর কাজে আরও গতি আসবে। সরকারি চাকরির ফাঁকা পদ পূরণের জন্য পরিকল্পনা নিয়ে আগাতে হবে।’