বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও সাবেক ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন এগিয়ে আনতে আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রবীন্দ্র ঘোষ।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. সাইফুল ইসলামের আদালতে এ আবেদন করেন তিনি। একই আদালতে একই আবেদন গতকালও (বুধবার) করেছিলেন অ্যাডভোকেট রবীন্দ্র ঘোষ। দুদিনই আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।
চট্টগ্রাম আদালতের এক আইনজীবী বলেন, প্রথমবার আদালতে কোনোপ্রকার ওকালতনামা ছাড়াই আবেদন করেন অ্যাডভোকেট রবীন্দ্র ঘোষ। আদালত যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন হয়নি মর্মে তা খারিজ করে দেন। দ্বিতীয়বার তিনি সুপ্রিম কোর্টের ওকালতনামা দিয়েছেন। আইনগত জটিলতায় এটি গ্রহণ করা হয়নি। সবমিলিয়ে আদালত চিন্ময়ের জামিন শুনানি আগের নির্ধারিত তারিখ অর্থাৎ ২ জানুয়ারি শুনানির জন্য ধার্য করেছেন।
জানা গেছে, গত ৩ ডিসেম্বর চিন্ময় দাসের জামিন আবেদন শুনানির দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ওইদিন চিন্ময়ের পক্ষে কোনো আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষও শুনানির জন্য সময়ের আবেদন করেন। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত জামিন শুনানির জন্য ২০২৫ সালের ২ জানুয়ারি ধার্য করেন। কিন্তু বুধবার ও বৃহস্পতিবার আসামিপক্ষে ঢাকা থেকে আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ এসে জামিন শুনানির তারিখ এগিয়ে আনার জন্য দুই বার আবেদন করেন।
আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, অভিযুক্ত চিন্ময় দাস একজন সন্ন্যাসী। তিনি সনাতনীদের পবিত্র তীর্ঘপীঠ শ্রী শ্রী পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ এবং বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের একজন প্রধান মুখপাত্র। মামলায় চিন্ময়ের বিরুদ্ধে বাদীর অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট এবং বিভ্রান্তিকর। তা ছাড়া চিন্ময় দাস দীর্ঘমেয়াদি পাকস্থলী, কার্ডিওভাসকুলার, ডায়াবেটিস ও শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত। তার পক্ষে নিয়োজিত আইনজীবীকে বিভিন্ন মাধ্যমে অত্র মামলা পরিচালনা তথা শুনানি না করার জন্য হুমকি প্রদান করা হয়েছে। তাই শুনানিতে তিনি আদালতে উপস্থিত হতে পারেননি। এটি সম্পূর্ণ ন্যায়বিচার বহির্ভূত। যেহেতু চিন্ময়ের পক্ষের আইনজীবী নিরাপত্তাজনিত কারণে অত্র মামলার জামিন শুনানির ধার্য তারিখে আদালতে উপস্থিত হতে পারেননি, সেহেতু ন্যায় বিচারের স্বার্থে এই ফৌজদারি মিস মামলার ধার্য তারিখ অগ্রবর্তী পূর্বক শুনানি করা একান্ত আবশ্যক। না হয় অভিযুক্ত ব্যক্তি ন্যায়বিচার হতে সম্পূর্ণ বঞ্চিত হবে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আদালত আজকে (বৃহস্পতিবার) অ্যাডভোকেট রবীন্দ্র ঘোষকে তিনবার শুনানি করার সুযোগ দিয়েছেন। কিন্তু উনি কোনোবারই চট্টগ্রাম বারের ওকালতনামা দিতে পারেননি। উনি দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট বারের। আইনগতভাবে এটি দিয়ে শুনানি করার সুযোগ নেই। আর গতকালতো (বুধবার) উনি ওকালতনামা ছাড়াই আবেদন করেন। যেটিও আইনসম্মত নয়।
গত ২৫ নভেম্বর বিকেলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার সময় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন কোতোয়ালি থানায় দায়ের হওয়া রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে মহানগর ষষ্ঠ কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। এ নিয়ে সেদিন বিক্ষোভ করেন ইসকন অনুসারীরা। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান।
একপর্যায়ে ওইদিন বিকেলে আদালতের প্রধান ফটকের বিপরীতে রঙ্গম কনভেনশন হলের গলিতে একদল ইসকন অনুসারীর হাতে খুন হন সরকারি আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম। এ ঘটনায় ২৯ নভেম্বর দিবাগত রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। ভুক্তভোগীর বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। একই ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় আরও কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়।