রমজান মাসের অর্ধেক পেরিয়ে গেলেও এখনো পুরোদমে জমে ওঠেনি ঈদের বাজার। মার্কেটগুলোতে চোখে পড়ার মতো ক্রেতার ভিড় নেই। মাসের শেষের দিকে হওয়ায় মানুষ এখনও বেতন-বোনাস পায়নি, তাই আশানুরূপ বিক্রি বাড়েনি বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে ক্রেতাদের অভিযোগ, গত বছরের চেয়ে এবার সবকিছুর দাম বেশি। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাব পড়েছে ঈদের বাজারেও।
এদিকে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের আশা, এপ্রিলের শুরু থেকেই জমজমাট হয়ে উঠবে ঈদের বাজার। ঈদে পাইকারি ও খুচরা বাজারে অন্তত ২৫ হাজার কোটি টাকা ব্যবসার আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
নগরের বিভিন্ন শপিং মলের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে ক্রেতারা চাপে আছেন। যার প্রভাব পড়েছে ঈদ বাজারে। এছাড়া মাসের মাঝামাঝি হওয়ায় সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীরা বাজারমুখী হচ্ছেন না। এ কারণে অন্যবারের তুলনায় বাজার জমতে একটু বেশি সময় লাগছে। তবে এপ্রিলের শুরু থেকে বাজারে ক্রেতার উপস্থিতি আর কম থাকবে না বলেই অভিমত তাদের।
মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা গেছে, সানমারের নিচে রয়েছে শৈল্পিক ব্র্যান্ডের শোরুম। পোশাকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ছেলেদের পাঞ্জাবি আর মেয়েদের কুর্তি ও লেহেঙ্গা। সর্বোচ্চ পাঁচ-ছয় হাজার টাকা দামের শার্ট যেমন রয়েছে, তেমনি আট-দশ হাজার টাকা দামের পাঞ্জাবিও রয়েছে। মেয়েদের জামা-কাপড়ের দামও তিন হাজার টাকার নিচে নেই।
জিইসি এলাকার সানমার, সেন্ট্রাল প্লাজা, ইউনেসকো শপিং সেন্টারে দেখা যায় ক্রেতা সমাগম। বেশিরভাগ ক্রেতা, শাড়ি, থ্রি-পিস, লেহেঙ্গা, ওড়না, প্যান্ট পিস, শার্ট পিস ইত্যাদি বেশি কিনছেন। তবে বেশিরভাগ ক্রেতার অভিযোগ, এবার সবকিছুর দাম একটু বেশি।
এসব শপিং মলে বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে রেখেছেন বিক্রেতারা। ক্রেতারা ভিড় জমিয়েছেন তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করতে। পছন্দে হলেই কিনে নিচ্ছেন কাঙ্ক্ষিত জামাটি।
চকবাজার, আগ্রাবাদ, নিউমার্কেট, দুই নম্বর গেইট, টেরিবাজার, বহদ্দারহাটসহ প্রায় সব মার্কেটে ক্রেতাদের মোটামুটি উপস্থিতি দেখা গেছে।
নগরীর চকবাজার গুলজার টাওয়ারে আসা ক্রেতা গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘রমজানের কয়েক দিন আগে নিউমার্কেটে যে জুতা ৯৫০ টাকায় কিনেছিলাম, সেটির দাম এখন ১ হাজার ৫৫০ টাকা। দেড় হাজার টাকার নিচে ভালো মানের কোনো পোশাক পাওয়া যাচ্ছে না। এমন অবস্থা হলে পরিবারের সবার জন্য ঈদের বাজার করা কঠিন হয়ে যাবে।’
রেয়াজউদ্দিন বাজারের বিনিময় টাওয়ারের পাইকারি বিক্রেতা আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘খুচরা ব্যবসায়ীরা প্রথম ধাপে ৭০ শতাংশের বেশি কাপড়, জুতা ও অন্যান্য পণ্য বিক্রির জন্য নিয়ে গেছেন। ১৫-২০ রমজানের মধ্যে দ্বিতীয় দফা বিক্রি হবে। গতবারের তুলনায় এবার ঈদবাজার ভালো মনে হচ্ছে।’
কাপড় ও জুতার জন্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় ঈদবাজার রিয়াজউদ্দিন বাজার। এখানকার ১৫ হাজার দোকানের প্রায় ৫০ শতাংশই পাইকারি বিক্রেতা। এর মধ্যে হাসিনা শপিং, বিনিময় টাওয়ার, রহমান ম্যানশন, প্যারামাউন্ট সিটি এবং সালেহ ম্যানশন কাপড় ও জুতা পাইকারি বিক্রির জন্য এ অঞ্চলে বিখ্যাত। ঢাকা ও চট্টগ্রামের পোশাক কারখানা ছাড়াও এখানকার ব্যবসায়ীরা থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, চীন, ভারত, পাকিস্তান ও দুবাই থেকে পণ্য আমদানি করেন।
তামাকুমণ্ডি লেইন বণিক সমিতির সভাপতি সওয়ার কামাল বলেন, ‘শবে বরাতের পরপরই চট্টগ্রামের পাইকারি পোশাকের বাজারগুলোতে বেচাকেনা শুরু হয়। পাইকারি বিক্রি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। রমজানের আগে থেকেই চট্টগ্রাম ও আশপাশের আট জেলার খুচরা ব্যবসায়ীরা বাজারে আসতে শুরু করেন। রমজানের প্রথম সপ্তাহেই পাইকারি বিক্রির ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে।’