২০২৪-২৭—এ চার বছরের চক্রের জন্য আইসিসির আয়ের বেশির ভাগ পেতে যাচ্ছে ভারত। এ নিয়ে পূর্ণ সদস্য বোর্ড ছাড়াও সহযোগী সদস্য বোর্ডগুলোর পক্ষ থেকে অসন্তোষ এসেছে। তবে প্রস্তাবিত এ মডেলের পক্ষে কথা বলছেন ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) প্রধান নির্বাহী রিচার্ড গোল্ড। ভারত বিশ্ব ক্রিকেটকে সহায়তা করবে বলেও নিজের আশার কথা শুনিয়েছেন গোল্ড।
প্রস্তাবিত মডেলে আগামী চার বছরের চক্রে ভারতের ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই) পাবে ২৩ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার (প্রায় ২ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা), যা আইসিসির ৬০ কোটি মার্কিন ডলার আয়ের ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্য কোনো দেশের ক্রিকেট বোর্ড ১০ শতাংশও পাবে না। বিসিসিআইয়ের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয় করবে ইসিবি; আইসিসির বার্ষিক আয়ের ৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ (৪ কোটি ১৩ লাখ মার্কিন ডলার) পাবে তারা। এরপর আছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ), তাদের সম্ভাব্য বার্ষিক আয় ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের বেশি। অন্যদিকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড পাবে ৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ। অর্থের অঙ্কে যা ২ কোটি ৬৭ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৯০ কোটি টাকা।
আইসিসির আয়ের ৮৮ দশমিক ৮১ শতাংশই পাবে পূর্ণ সদস্য দেশগুলো। ৯৬টি সহযোগী সদস্য মিলে পাবে বাকি ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ। আগামী মাসে আইসিসির বোর্ডসভায় অনুমোদন পেতে পারে লভ্যাংশ ভাগাভাগির প্রস্তাবিত এ মডেল।
অন্য দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের প্রাপ্ত অর্থের পার্থক্য ‘বেশ বড়’, এমন মন্তব্য করলেও এটিকে ন্যায্য বলে উল্লেখ করেছেন গোল্ড। দ্য ফাইনাল ওয়ার্ড পডকাস্টকে তিনি বলেন, ‘যখন আপনি দেখবেন এ মূল্যটা কোথায় তৈরি হয়, তাহলে এটিকে ন্যায্যই মনে হবে। হয়তো এখানে-সেখানে একটু পরিবর্তন আসবে। তবে ভারত যে এই দাপুটে অবস্থানে আছে, সেটি তাদের লভ্যাংশ এনে দেওয়া ও খেলাকে এগিয়ে নেওয়ার সামর্থ্যের কারণেই। ১৪০ কোটি মানুষ, একটা খেলা, ১০টি (আইপিএল) দল, একটি আন্তর্জাতিক দল আছে তাদের।’
ভারতের কাছেই আইসিসির আয়ের বেশির ভাগ গেলে ক্রিকেটের সম্প্রসারণ হবে না, এমন আলোচনাও আছে। তবে গোল্ডের মতে, ভারত এ দায়িত্ব পালন করবে, ‘আমি বরং বিশ্ব ক্রিকেটকে সহায়তা করতে ভারতের সংকল্পে মুগ্ধ। আপনি শতকরা হারের দিকে তাকিয়ে বলতেই পারেন, “এটা ঠিক না, সবার সমান পাওয়া উচিত।” তবে আমাদের বাজারের আকার বুঝতে হবে। ভারত অন্য সব দলের মতো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে। তাদের এমন করার কারণ, তারা জানে তাদের দলের কারণে হোম বোর্ডগুলো অর্থ পায়। আমার মনে হয়, ব্যাপারটি উল্টো দিক থেকে দেখা উচিত।’
লভ্যাংশ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বৈষম্য টের পেলেও ভারতকে অগ্রাহ্য করতে চান না গোল্ড, ‘আমি বুঝি এটি (বৈষম্য)। তবে এটিও বুঝি, ভারত কতটা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তাদের ছাড়া আমরা এমন আয় করতে পারতাম না।’
এমন বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে বর্তমান মডেলটিতে পরিবর্তন আনা যেতে পারে বলেও পরামর্শ দিয়েছেন গোল্ড। এ ক্ষেত্রে হোম বোর্ড সফরকারী দলগুলোকে লভ্যাংশের একটা ভাগ দিতে পারে বলেও মনে করেন তিনি যেমন ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডের মতো দেশগুলো এখন টেস্টের চেয়ে সীমিত ওভারের সিরিজ আয়োজনের দিকে বেশি আগ্রহী। কারণ, সীমিত ওভারে আগ্রহ বেশি, লাভও বেশি।
এ ব্যাপারে নজর দেওয়ার সময় এসেছে বলেও মত তাঁর, ‘কেউ যখন ইংল্যান্ড সফরে আসে, আমরা তো তাদের টাকা দিই না, তাদের খেলোয়াড়দেরও দিই না। এখন দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট যেভাবে চলছে, তাতে নিজেদের আয় ধরে রাখাটাই মূল। যে দেশে সফর করবেন, সেই দল তখন আয় করবে। এখানেই বাজারের বৈষম্য তৈরি হয়। এ ব্যাপারে নজর দিতে হবে আমাদের। শুধু টেস্ট খেলার আগ্রহ তৈরি করলে হবে না। বোর্ডগুলো যাতে তাদের খেলোয়াড়দের টেস্ট খেলিয়ে ভালোভাবে টাকা দিতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।’