বিশ্বের মহাসাগরগুলোর বিস্তীর্ণ এলাকায় গেল দুই দশকে পানির রঙে পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। মহাসাগরগুলোর গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে কিছু অংশের পানি সবুজাভ রঙ ধারণ করেছে। গবেষকরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মহাসাগরগুলোর জীবনচক্রে পরিবর্তন আসছে।
নতুন এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। বিজ্ঞানবিষয়ক ব্রিটিশ জার্নাল নেচার গবেষণা বুধবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মহাসাগরগুলোর মধ্যে অর্ধেকের রঙ পরিবর্তনের বিষয়টি তাঁরা শনাক্ত করেছেন। এটি পৃথিবীর পুরো স্থলভাগের চেয়েও বড় এলাকাজুড়ে বিস্তৃত।
এ পরিবর্তন এসেছে বাস্তুতন্ত্রে; বিশেষ করে ছোট্ট প্লাঙ্কটনগুলোর মধ্যে। এগুলো সমুদ্রে খাদ্যের প্রধান জোগান। গবেষণা প্রতিবেদনের প্রধান লেখক ব্রিটেনের ন্যাশনাল ওশিনোগ্রাফি সেন্টারের বি. বি. কায়েল এএফপিকে বলেন, মহাসাগরের পানির রঙ এর বাস্তুতন্ত্রের অবস্থা তুলে ধরে। এ কারণে রঙের পরিবর্তন মানে বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তন। সমুদ্রের পানি গাঢ় নীল হওয়ার অর্থ হল, এতে তেমন একটা জীবন নেই। কিছু সবুজাভ, মানে এতে জীবনের উপস্থিতি বেশি। অর্থাৎ ফাইটোপ্লাঙ্কন বিদ্যমান আছে। এসব জলজ উদ্ভিদ থেকে আমরা বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন পেয়ে থাকি। এগুলোর ক্লোরোফিলের কারণে পানি সবুজাভ দেখায়।
গবেষকরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব শনাক্ত করতে মহাসাগরগুলোর বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তনের ধরন নির্ধারণের পথ খুঁজে পেতে আগ্রহী। কিন্তু আগে চালানো গবেষণাগুলোর পরামর্শ, পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে, তা শনাক্ত করতে অন্তত তিন দশক ধরে মহাসাগরের ক্লোরোফিল পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। কারণ, প্রতিবছর এগুলোর গতি-প্রকৃতি বদলায়।
সাম্প্রতিক গবেষণার ক্ষেত্রে গবেষকরা মোডিস এক্যুয়া স্যাটেলাইট ব্যবহার করেছেন। ২০০২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এ স্যাটেলাইট মহাসাগরগুলোর সাতটি স্তরের রঙ সংগ্রহ করেছে। মহাসাগরের রঙের এ পরিবর্তন এতটা সূক্ষ্ম যে, মানুষ খালি চোখে তা বুঝতে সক্ষম হবে না। সাধারণভাবে মানুষ সমুদ্রের জলরাশিকে নীলই দেখতে পাবেন।
গবেষকরা কম্পিউটার মডেলের মাধ্যমে প্রতিবছর পাওয়া তথ্য যাচাই করে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন। কম্পিউটারে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে, তার একটি মডেল সংরক্ষিত ছিল। তবে গবেষকরা মনে করেন মহাসাগরের রঙ পরিবর্তন অধিকতর গবেষণা প্রয়োজন।