সুনামগঞ্জের মানুষ এখনো আঁতকে ওঠেন গেলো বছরের জুনে ভয়াবহ বন্যার কথা মনে করে। ২০২২ সালের ১৬ জুন দিনভর মুষলধারে বৃষ্টি হয়। পরদিন ১৭ জুন ভোররাত থেকে ভয়াবহ বন্যায় জীবন নিয়ে শুরু হয় টানাটানি। এই বন্যা সুনামগঞ্জের বুকে বিশাল ক্ষত সৃষ্টি করে গেছে যা এখনো শুকোয়নি।
সেই জুন মাস যেন আবারও ভয়াবহ রূপে ফিরেছে সুনামগঞ্জের মানুষের মাঝে। জুনের মাঝামাঝি সময়ে এসে সেই মুষলধারে বৃষ্টি। বাড়ছে নদ-নদীর পানি। ফলে আবারো বন্যা চোখ রাঙানি দিচ্ছে ভাটির জনপদ সুনামগঞ্জের মানুষকে। গত কয়দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদ-নদী ও হাওরে পানি বেড়েছে। রোববার (১৮ জুন) সকাল পর্যন্ত উজানের পাহাড়ি সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়ক ডুবে গিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সুনামগঞ্জ-তাহিরপুরের মাঝামাঝি বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়নের কৈয়ারকান্দা ১০০ মিটার নামক স্থানে সড়ক পাহাড়ি ঢলে হাওরের পানি বেড়ে ডুবে গিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয়রা জানান, জেলার যাদুকাটা, চেলা, সুরমাসহ সবকটি নদীর পানি প্রবল বেগে নিম্নাঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে জেলার সবকটি হাওর পানিতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।
এ কারণে কয়েকটি উপজেলায় সড়কও পানিতে তলিয়ে গেছে। জেলা শহরে আসতে গিয়ে কোনো কোনো সড়কে মানুষজন নৌকা দিয়ে পারাপার হচ্ছেন। পাহাড়ি ঢলের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার হাওর পাড়ে ও সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী কয়েক লক্ষাধিক মানুষ গত বছরের বন্যার আশঙ্কায় আতঙ্কের মধ্যে সময় পার করছেন।
রবিবার (১৮ জুন) দুপুর পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জের ছাতক পয়েন্টে বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৪১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১১২ সেন্টিমিটার এবং ছাতক উপজেলায় বিপৎসীমার মাত্র ৭০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
রবিবার (১৮ জুন) বিকেল ৩টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৮৭ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার দশমিক ২৮ সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ভাটি এলাকায় বাড়ছে পানির চাপ।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী জানান, বন্যার আশঙ্কায় সরকারের তরফ থেকে পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা মজুদ এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।