বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর বসানো ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আরোপ সরকারের ‘অপরিণামদর্শী’ সিদ্ধান্ত। এসময় তিনি তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে রাজস্ব আয়ের অন্য উপায় খুঁজতেও সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন ফখরুল।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের এমন সিদ্ধান্তে সাধারণ জনগণের জীবনের ওপর প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন বিএনপি। আমরা সাধারণ জনগণের ওপর কর এবং ভ্যাট তথা পরোক্ষ কর আরোপের মত অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করার আহ্বান জানাচ্ছি।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আরোপে সাধারণ মানুষের ওপরে এর নেতিবাচক প্রভাবের কথা তুলে ধরেন ফখরুল ইসলাম।
ফখরুল বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চলমান অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা তথা উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেই একশর বেশি পণ্যের ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আরোপ করেছে এবং কিছু পণ্যের কর অব্যাহতি তুলে নিয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তটি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বিশেষ করে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর ওপর নেতিবাচক অর্থনৈতিক প্রভাব ফেলবে, চাপ বাড়াবে।
তিনি বলেন, সরকারের এমন আকস্মিক সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ী মহলসহ আর্থিক খাতে সংশ্লিষ্ট নানা মহলের তীব্র অসন্তোষ পরিলক্ষিত হচ্ছে। অর্থনীতিবিদের মতে, সরকারের এই সিদ্ধান্ত স্পষ্ট প্রমাণ করে যে সরকারের মুদ্রানীতি, রাজস্বনীতি ও বাজার ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়ের চরম ঘাটতি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এমনিতেই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। এই ভঙ্গুর অবস্থায় সহজ রাস্তায় হেঁটে ভ্যাটের হার তথা কর বাড়িয়ে সরকার খরচ মেটানোর চেষ্টা করলে তা দেশের জনগণের জন্য কোনোভাবেই কল্যাণকর হবে না।
অন্তর্বর্তী সরকারকে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, আমরা পূর্বেও বলেছি, এই অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা সর্বাত্মক সমর্থন ও সহযোগিতা করে যাব। তাই সরকারকে অনুরোধ করছি, আপনারা নীতিমালা প্রণয়নে জনগণের কথা সর্বপ্রথম বিবেচনায় নিন।
ফখরুল বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের সর্বপ্রথম নজর দেয়া উচিত খরচ কমানোর দিকে। আমরা মনে করি, সরকার তার উন্নয়ন বাজেট পুনর্বিবেচনা করে অপ্রয়োজনীয় ও আর্থিকভাবে অযৌক্তিক প্রকল্পগুলো বাদ দিলে প্রায় ২০ শতাংশ খরচ কমানো সম্ভব এবং এতে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করতে সহায়ক হবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রা ও রাজস্বনীতি এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত পদক্ষেপের অভাব রয়েছে। গোষ্ঠীস্বার্থ উপেক্ষা করতে পারছে না সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংক সুদের হার বাড়াচ্ছে মূল্যস্ফীতি কমাতে, অন্যদিকে সরকার কর বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা মূল্যস্ফীতি বাড়াবে। এক মন্ত্রণালয় ডিম আমদানির অনুমতি দিচ্ছে, আরেক মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা তা আটকে দিচ্ছে। এই অদক্ষতা ও সমন্বয়হীনতার মাশুল দিতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে।
অপ্রয়োজনীয় ও দুর্নীতিগ্রস্ত মেগা প্রজেক্টের বিপরীতে বরাদ্দকৃত অর্থ আপাতত বন্ধ রেখে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব বলেও মনে করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, পতিত সরকার কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ বর্তমান বাজেটে বরাদ্দ রেখেছিল ৪০ হাজার কোটি টাকা, যার পরিমাণ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ছিল ৩২ হাজার কোটি টাকা। মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও নিজেদের স্বার্থে বছরের পর বছর বাড়ানো হয়েছে এগুলোর মেয়াদ। এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বছরের পর বছর ক্যাপাসিটি চার্জের নামে চলেছে হরিলুট। গত ১৪ বছরে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে এমন লুটপাট হয়েছে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার ওপর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন।