Google search engine
প্রচ্ছদজাতীয়কারাবন্দি ‘নির্দোষ’ বিডিআর সদস্যদের মুক্তিসহ ৮ দফা দাবি

কারাবন্দি ‘নির্দোষ’ বিডিআর সদস্যদের মুক্তিসহ ৮ দফা দাবি

প্রায় ১৬ বছর আগে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় কারাগারে থাকা বাহিনীর ‘নির্দোষ’ সদস্যদের মুক্তিসহ আট দফা দাবি জানিয়েছেন কারবন্দিদের স্বজনরা।

শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘কারা নির্যাতিত বিডিআর পরিবার’ ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবিগুলো জানানো হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুল আজিজ, সমন্বয়ক রাকিব, তুহিন প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি যে আট দফা দাবি তুলে ধরেন, তার মধ্যে আছে- ‘নির্দোষ’ সব বিডিআর সদস্যকে নিঃশর্ত মুক্তি প্রদান ছাড়াও হাই কোর্টে করা রিট আবেদন অনুযায়ী বিডিআর সদস্যদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার দ্রুত পুনঃতদন্ত; তদন্ত প্রতিবেদন জাতির সামনে প্রকাশ; রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনে যেসব বিডিআর সদস্যদের মৃত্যু হয়েছে- তার সঠিক কারণ উদ্‌ঘাটন করে দোষীদের শাস্তি; ১৮ হাজার ৫২০ জন বিডিআর সদস্যকে চাকরিতে পুনর্বহাল; সব শহীদ সেনা, বিডিআর ও ক্ষতিগ্রস্ত বিডিআর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ (বেতন, ভাতা, পেনশন) ও পুনর্বাসন; বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) নামে বিজিবিকে (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) প্রতিস্থাপন করা এবং প্রতি বছরের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারিকে শহীদ সেনা দিবস ঘোষণা।

রিমান্ডের নামে প্রত্যেক বিডিআর সদস্যকে নির্যাতন করা হয়েছে দাবি করে তৎকালীন বিডিআরের কারাবন্দি এক সদস্যের সন্তান আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আধা সামরিক বাহিনী হিসেবে বিডিআরের একটি আইন আছে। সেই আইনে বিচারে সাজা সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করা হলো কেন?

বিডিআর কল্যাণ পরিষদের সভাপতি ফয়জুল আলম বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় তৎকালীন সরকারের ইন্ধনে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৮ হাজার ৫২০ বিডিআর সদস্যকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তাদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। অনেককে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। কারাদণ্ডের সাজা শেষ হওয়ার পরও কারাগার থেকে তারা জামিনে বের হতে পারেননি।

প্রত্যেক নাগরিকের জামিন পাওয়ার অধিকার আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, যেসব বিডিআর সদস্য কারাবন্দি আছেন, তাদের পরিবারের সদস্যরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। একদিকে তাদের জীবন, আরেকদিকে তাদের সন্তানের জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে। তৎকালীন সরকার ‘ক্ষমতা পাকাপোক্ত’ করার জন্য বিডিআর বিদ্রোহ ঘটিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন ফয়জুল আলম।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদরদপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা। সেই বিদ্রোহের পর সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিডিআরের নাম বদলে যায়, পরিবর্তন আসে পোশাকেও। এ বাহিনীর নাম এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি। বিদ্রোহের বিচার বিজিবির আদালতে হলেও হত্যাকাণ্ডের মামলা বিচারের জন্য আসে প্রচলিত আদালতে। এই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে মুক্তি আটকে আছেন ৪৬৮ বিডিআর সদস্যের। হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন।

২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাই কোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরো ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন। হাই কোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন।

অন্যদিকে হাই কোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়। অন্যদিকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু মাঝপথে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত রেখে শুধু হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। যে কারণে এই মামলার বিচার ঝুলে যায়।

spot_img
spot_img

এই বিভাগের আরও পড়ুন

চট্টগ্রাম

সারাদেশ

বিশেষ-সংবাদ

বিনোদন