চট্টগ্রামের পশুর বাজার বিবিরহাটে গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে কোরবানির গরু। তার উপর মানুষের ভিড়। এমন পরিবেশে গরুর পরিচর্যা করছিলেন এক নারী। বেশভূষা দেখে মনে হচ্ছে না সে স্বাভাবিক কোনো খামারি। দেশের রীতিতে সাধারণত এমন দৃশ্য চোখে পড়ে না। তাই কৌতূহল থেকে ওই নারীর সঙ্গে কথা বলেন এই প্রতিবেদক।
জানালেন তার সংগ্রামী জীবনের কথা। নারী হয়েও গরু পালনে এগিয়ে আসার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বাজারে আগত দর্শনার্থী ও ক্রেতারা।
দীর্ঘ আলাপে জানা গেল, ওই নারীর নাম সালমা খাতুন। উচ্চশিক্ষিত এই নারীর বাড়ি রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল কলসি গ্রামে। চট্টগ্রামে এসেছেন কোরবানির বাজারে তাঁ লালিত গরু বিক্রি করতে। এবারের কোরবানির বাজারে তিনি ১৪টি গরু এনেছেন।
সালমা খাতুন বলেন, ২০১৯ সালে শখের বসে একটি গাভী পালন শুরু করি। এরপর মনে হলো, গরুর সংখ্যা বাড়ানো দরকার; এতে লাভবান হওয়া যাবে। এরপর নানা প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে গরুর সংখ্যা বাড়ায়। ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে গরুর খামার গড়ে তুলি।
তিনি বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ কলেজ থেকে অনার্স ও রাজশাহী থেকে মাস্টার্স শেষ করি। আমি একটি চাকরি করতাম। করোনার সময় সেই চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। এরপর অনলাইনে আমের বিজনেস করি। শখের বসে গরু পালন করি। সোনালী ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়ে বড় পরিসরে শুরু করি। কিন্তু ২০২৩ সালে ব্যক্তিগত কারণ লস হয়। এরপর ইউসিবি ব্যাংক চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখা থেকে ৫ লাখ টাকা লোন নিয়ে লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন।
সালমা খাতুন বলেন, ১৪টি গরু নিয়ে চট্টগ্রামের এই বাজারে এসেছি। আমার এখানে এক লাখ ১২ হাাজার থেকে পৌনে দুই লাখ টাকার পর্যন্ত গরু আছে। আমরা বাজারে গরু তুলেছি বৃহস্পতিবার। এখনও গরু বিক্রি হয়নি। তবে আশাকরি সব বিক্রি হয়ে যাবে। ২০২২ সালেও আমি এই বাজারে এসেছিলাম। তখনও সব বিক্রি করে গেছি।
সালমা খাতুনের গরু পালন ও গরু বাজারে আনার প্রসঙ্গে সাইফ উদ্দিন নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘একজন নারী হয়ে গরুর খামার করা সাহসী ব্যাপার। তিনি যে বাজারে গরু নিয়ে এসেছেন এটিও দেশে তেমন দেখা যায় না। নানা সংকটেও দেশের খাদ্য উৎপাদনে তিনি সরাসরি ভূমিকা রাখছেন। এভাবে সবার এগিয়ে আসা উচিত।’
মাঈনুল ইসলাম নামে এক গরু বেপারী জানান, তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এসেছেন। বলতে গেলে দেশের শুরুর প্রান্ত থেকে শেষ প্রান্তে আসা। তার সাহস আছে। একজন খামারি হিসেবে যেন সে ন্যায্য দাম পায় সেটি আশা করবো।