Google search engine
প্রচ্ছদআন্তর্জাতিকরাখাইনের মংডু শহর আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে

রাখাইনের মংডু শহর আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে

বাংলাদেশ-সংলগ্ন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহর বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এদিকে আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশের একটি বোঝাপড়ার সম্পর্ক তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। রোহিঙ্গাদের ফেরানো বিষয়ে আরাকান আর্মির সঙ্গে আলোচনায় জোর দিয়েছেন তারা। তবে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের প্রায় ২৭০ কিলোমিটার সীমানার পুরোটাই এখন আরাকান আর্মির দখলে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

জান্তার শেষ অবশিষ্ট সীমান্ত ঘাঁটি মংডু শহরের বাইরে অবস্থিত বিজিপি৫ ব্যাটালিয়নও গত কয়েক মাসের টানা লড়াইয়ের পর রোববার তারা দখলে নিয়েছে। ঘাঁটি ঘেরাও করে রাখা আরাকান আর্মির ভিডিওতে দেখা যায়, তাদের যোদ্ধারা ঘাঁটিতে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র থেকে গুলি ছুড়ছে। পাশাপাশি বিমান বাহিনীও হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

২০২১ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে মিয়ানমারের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ চলছে দেশটিতে। প্রায় আট মাসেরও বেশ সময় ধরে দেশটির জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে আরাকান আর্মি।

বিজিপি৫ মুসলিম রোহিঙ্গা গ্রামের মায়ো থু গির জায়গায় নির্মিত হয়েছিল। ২০১৭ সালে সশস্ত্র বাহিনী গ্রামের রোহিঙ্গা জনসংখ্যার বেশিরভাগকে বিতাড়িত করার সময় পুড়িয়ে দিয়েছিল।

জুনে শুরু হওয়া মংডুতে লড়াইয়ের তীব্রতা বিচার করলে ধারণা করা যায়, দেশটি তাদের শত শত সেনা হারিয়েছে।

গত ৭ ডিসেম্বর আরাকান আর্মির তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাখাইনের আন অঞ্চলের ৩০টিরও বেশি জান্তা বাহিনীর ক্যাম্প তারা দখল করে নিয়েছে। এসময় সামরিক বিমান ও সামরিক হামলা প্রতিহত করে পাল্টা জবাবও দিচ্ছে তারা। এর আগে, মংডুতে মিয়ানমারের সেনারা শনিবার থেকে আত্মসমর্পণ শুরু করে।

আরাকান আর্মির ভিডিওতে দেখা যায়, সাদা কাপড় নাড়তে নাড়তে করুণ অবস্থায় বেরিয়ে আসছেন সেনারা। কেউ কেউ ক্রাচে ভর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন, বা ন্যাকড়ায় মোড়ানো আহত পায়ে হেঁটে বের হচ্ছেন। খুব কম লোকের পায়েই জুতো ছিল।

বিধ্বস্ত ভবনের ভেতরে বিজয়ী বিদ্রোহীরা লাশের স্তূপের ভিডিও ধারণ করে।

আরাকান আর্মি বলছে, মংড়ু অবরোধের সময় ৪৫০ জনেরও বেশি সেনা নিহত হয়েছে। এতে আটক কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরিন তুন ও তার কর্মকর্তাদের ফ্ল্যাগপোলের নিচে হাঁটু গেড়ে বসে বিদ্রোহীদের ব্যানার উড়ানোর ছবি প্রকাশ করা হয়েছে।

সম্প্রতি মংডু ছেড়ে বাংলাদেশে আসা এক রোহিঙ্গা বিবিসিকে বলেন, মংডু ও আশপাশের গ্রামের ৮০ শতাংশ আবাসন ধ্বংস হয়ে গেছে। শহর নির্জন। প্রায় সব দোকানপাট ও বাড়িঘরে লুটপাট চালানো হয়েছে।

২০১৭ সালে সাত লাখ রোহিঙ্গাকে বিতাড়িত করার পরও রাখাইনে প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আরাকান আর্মি কীভাবে আচরণ করবে তাও স্পষ্ট নয়। সবচেয়ে বেশি মানুষ উত্তর রাখাইন রাজ্যে বাস করে। মংডু দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত শহর।

বিবিসি লিখেছে, আরাকান আর্মির সমর্থক সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতিগোষ্ঠী রাখাইনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই সম্পর্কের টানাপড়েন চলছে।

বাংলাদেশের বিশাল শরণার্থী শিবিরে অস্থান করা রোহিঙ্গা গোষ্ঠীগুলো সেনাবাহিনীর পক্ষাবলম্বনের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর তারা এখন আরও খারাপ অবস্থায় আছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিনকে এ নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। জানতে চান, মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের যোগাযোগ হয়েছে কিনা। তিনি বলেন, জাতীয় স্বার্থে যা করণীয়, তাই করব। এর লক্ষ্য হবে বাংলাদেশে অবস্থানরত মিয়ানমারের নাগরিক বাস্তুচ্যুত ১২ লাখ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন।

বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের করণীয় বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, আমি বারবারই বলে আসছি, সরাসরি আলোচনা শুরু হওয়া উচিত। ঢাকায় না হলেও অন্য কোনো শহরে আলোচনা করা যেতে পারে। আরাকান আর্মি তো বটেই, সেখানে শক্তিশালী আরও অন্তত ১০টি সংগঠন আছে। তাদের সঙ্গেও আলোচনা দরকার।

spot_img
spot_img

এই বিভাগের আরও পড়ুন

চট্টগ্রাম

সারাদেশ

বিশেষ-সংবাদ

বিনোদন