সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দামেস্ক ছেড়ে পালিয়ে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা তাস। খবর রয়টার্সের।
তাসে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিবারের সদস্যরাসহ মস্কো এসে পৌঁছেছেন বাশার আল আসাদ। রাশিয়া তাদের বসবাসের অনুমতি দিয়েছে।
বাশার আল আসাদের সঙ্গে আছেন তার স্ত্রীর আসমা আসাদ এবং এই দম্পতির তিন ছেলেমেয়ে- জেইন আল আসাদ, করিম আল আসাদ এবং হাফেজ আল আসাদ। ক্রেমলিনের তথ্য অনুযায়ী, তারা সবাই এখন মস্কোতে রয়েছেন।
সিরিয়ায় উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘে আলোচনা এবং সেখানকার বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে জাতিসংঘের প্রতিনিধিদরের দ্বিপাক্ষিক সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে মস্কো।
তাসের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ক্ষমতা দখলকারী বিদ্রোহীগোষ্ঠীর নেতৃত্বের সঙ্গেও কথা বলেছে ক্রেমলিন। বিদ্রোহীরা আশ্বাস দিয়েছে যে সিরিয়ায় রুশ সেনাদের ঘাঁটির কোনো ক্ষয়ক্ষতি তারা করবে না।
বাশার আল আসাদ সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের পদে আসেন ২০০০ সালে। এর আগে তার বাবা হাফেজ আল-আসাদ ২৯ বছর দেশটি শাসন করেছিলেন।
বাশার ক্ষমতায় আসার ১১ বছর পর ২০১১ সালে আল কায়দা, ইসলামিক স্টেটসহ সিরিয়ার বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠী প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। তাদের এ যুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাশারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা।
গৃহযুদ্ধের এক পর্যায়ে সিরিয়া এবং সীমান্তবর্তী অপর দেশ ইরাকের বিশাল এলাকা জুড়ে নিজেদের রাজ্যও গঠন করে আইএস। সিরিয়ার রাক্কা শহর ছিল সেই রাজ্যের রাজধানী।
বিদ্রোহী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো অবশ্য বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি। কারণ সে সময় বাশার আল আসাদকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিল রাশিয়া, ইরান ও লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। মূলত এই তিন মিত্রশক্তির ওপর ভর দিয়েই ২০২১ সালে বিদ্রোহী বাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য করেন আসাদ।
তবে এবারের পরিস্থিতি খানিকটা ভিন্ন। কারণ ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়া এবং ইসরায়েল ইস্যুতে ইরান ও হিজবুল্লাহ ব্যস্ত থাকায় তারা আগের মতো পূর্ণ শক্তি নিয়ে বাশার আল আসাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে পারেনি।
ফলে সিরিয়ার সরকারবিরোধী বিদ্রোহীদের সামনে ক্ষমতা দখলের একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং বিদ্রোহীরা সেই সুযোগ গ্রহণ করে মাত্র ১২ দিনের মাথায় রাজধানী দামেস্ক দখল করে নিয়েছে।
রোববার তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নামের একটি জঙ্গিগোষ্ঠীর নেতৃত্বে বিদ্রোহীরা দামেস্কে প্রবেশ করে, বাশারও প্রায় কাছাকাছি সময়ে দেশত্যাগ করেন। সে সময় অবশ্য গুঞ্জন উঠেছিল যে বাশারকে বহনকারী বিমানটি দুর্ঘটনা কবলিত হয়েছে এবং এতে বাশার নিহত হয়েছেন। তবে এই গুঞ্জনের পক্ষে নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমাণ ছিল না।