প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সুইজারল্যান্ড সফরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার পরিমাণ কমে যাওয়ার উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ ধরে রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বুধবার (২১ জুন) দুপুরে গণভবনে পূর্বনির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
সুইজারল্যান্ড সফরে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপো গ্র্যান্ডির সঙ্গে সাক্ষাতের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের দ্রুত ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে মিয়ানমারে অনুকূল পরিবেশ তৈরির জন্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের (ইউএনএইচআরসি) প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার পরিমাণ কমে যাওয়ার উদ্বেগ প্রকাশ করি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ ধরে রাখার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছি।
সুইস রাষ্ট্রপতির সঙ্গেও রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংকট নিরসনে সুইজারল্যান্ডসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে। সুইজারল্যান্ডে ব্রিকসের বর্তমান চেয়ার দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে ব্রিকস জোটে বাংলাদেশের যোগ দেয়ার আগ্রহের কথা জানাই। আগামী আগস্টে জোহানেসবার্গে ব্রিকসের শীর্ষ সম্মেলনে জোটের সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সম্ভাবনার কথা জানান দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট।
কাতার সফর প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাতার সফরে গুরুত্ব পায় জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি। এ ছাড়া ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২ পরবর্তী সময়ে কর্মহীন হয়ে যাওয়া বাংলাদেশিদের বিকল্প কর্মসংস্থানের বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন কাতারের আমির। চলতি বছর বাংলাদেশ সফরের বিষয়েও ইতিবাচক সাড়া দেন তিনি। কাতারে সাম্প্রতিক দুটি সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও কাতারের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।
গত ১৩ জুন সকালে সুইজারল্যান্ডের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট। পরদিন ১৪ জুন প্যালেস ডি নেশনসের বৈঠক কক্ষে সুইস কনফেডারেশনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী। এতে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করতে সুইস কনফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট অ্যালেন বারসেটের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
একই দিন সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় প্যালেস ডি নেশনস-এ ‘ওয়ার্ল্ড অব ওয়ার্ক সামিট-২০২৩’-এর পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরে জেনেভায় ১৫ জুন প্রধানমন্ত্রীর আবাসস্থলের সভাকক্ষে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মহাপরিচালক (ডিজি) ড. ওকনজো ইওয়েলা। এতে ডব্লিউটিওর ডিজি মৎস্যখাতের ভর্তুকি বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে জানান, তারা এ লক্ষ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করবে।
এ সময় ডব্লিউটিওর ডিজি আগামী সেপ্টেম্বরে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ সম্মেলনে অংশ নিতে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে কথা বলার সময় এ বিষয় তুলে ধরতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান, যাতে করে বিরোধ নিষ্পত্তি সংস্থা সক্রিয় হয়। ডিজি বলেন, ‘এটি ডব্লিউটিওর মূল শক্তি।’
এর আগে, একই স্থানে কাতারের শ্রমমন্ত্রী ড. আলী বিন সামিক আল মারি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। কাতারের মন্ত্রী বলেন, তার দেশে প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার বাংলাদেশি জনশক্তি কাজ করছে। এসব শ্রমিকের কর্মক্ষমতা নিয়ে তারা সন্তুষ্ট।
সফর শেষে ১৭ জুন রাতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিয়মিত একটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।