রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ডলার সংকটে ব্যাংকে শতভাগ এলসি মার্জিনে গাড়ি আমদানি সম্ভব হচ্ছে না। আমদানিকারকরা সময়মতো ঋণপত্র (এলসি) খুলতে না পারায় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি কমে গেছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ২০২২ সালের তুলনায় গাড়ি আমদানি কম হয়েছে ৬ হাজার ৭৩০টি বা ২১.৭৯ শতাংশ।
২০২২ সালে গাড়ি আমদানির পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৮৮০টি। গেল বছর তা কমে আমদানি হয়েছে ২৪ হাজার ১৫০টি। ৫ বছরের ব্যবধানে দেশের বৃহৎ এই সমুদ্র বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি কমেছে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের তথ্যমতে, ২০২০ সালে ২৮ হাজার ৬৯৭টি গাড়ি আমদানি হয়। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এলে ২০২১ সালে ২০২০ সালের তুলনায় ৪৭.৯৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে গাড়ি আমদানি হয় ৫৫ হাজার ১৫১ টি।
পরবর্তীতে ২০২২ সালে আবার গাড়ির আমদানি কমে যায়। ওই বছর আমদানি হয় ৩০ হাজার ৮৮০টি গাড়ি। ২০২৩ সালে গাড়ি আমদানি আরও কমে যায়।
তবে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি কমলেও মোংলা বন্দর দিয়ে গাড়ি ডেলিভারির ক্ষেত্রে বন্দর চার্জ কিছু কম হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী মোংলা বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি করছেন।
বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের ৬০ শতাংশ গাড়ি আমদানি করা হয় মোংলা বন্দর দিয়ে। বাকি ৪০ শতাংশ হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে।
বাংলাদেশে আমদানি হওয়া গাড়ির প্রায় ৭৫ শতাংশ রিকন্ডিশনড বা পুরাতন গাড়ি। ১ থেকে ৫ বছরের পুরোনো এসব গাড়ি আমদানি খাতে কাস্টমসের শুল্ক বাবদ আয় হয় প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। আমদানির বাকি ২৫ শতাংশ গাড়িগুলো ‘ব্র্যান্ড নিউ’।
বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেইক্যালস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) নির্বাহী কমিটির সদস্য আহসানুর রহমান আরজু বলেন, সব গাড়ির দাম-ই বেড়ে গেছে, এ কারণে বিক্রি এখন কম। সারাদেশে বিক্রি অনেক কমে গেছে।
এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ডলার সংকট চলছে। এ কারণে এলসি খুলতে জটিলতার কারণে গাড়ি আমদানি করা হচ্ছে তুলনামূলকভাবে কম। সার্বিক পরিস্থিতিতে এই খাতের ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বারভিডার এ কর্মকর্তা।
গাড়ি আমদানিকারক হাবিবুর রহমান বলেন, গাড়ি রাখার ভাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে মোংলা বন্দরে কম। বন্দরে গাড়ি আসার পর তিন দিন বিনা ভাড়ায় গাড়ি রাখার সুযোগ রয়েছে। চতুর্থ দিন থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন গাড়ি রাখার ভাড়া ৯০৫ টাকা। মোংলা বন্দরে এই ভাড়া ৩৬০ টাকা। ১৫ দিন পর এই ভাড়া আরও বাড়তে থাকে।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম বন্দরে ৩ হাজার গাড়ি রাখার শেড রয়েছে। এছাড়া মাল্টিপল শেডেও ৩০০-৪০০ গাড়ি রাখা যায়। সব মিলিয়ে গাড়ি আমদানিকারকদের জন্য সব সুবিধা রাখা আছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস জানায়, ২০২২ সালের নভেম্বরে কয়েকটি গাড়ি আমদানিকারক এলসি ছাড়াই ৬৫০ রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি করেন। এলসি ছাড়া আমদানি করায় পরবর্তীতে জরিমানা দিয়ে এসব গাড়ি ছাড় দেয় চট্টগ্রাম ও মোংলা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
তবে ২০২৩ সালে কাস্টমসের কড়াকড়ির কারণে ব্যবসায়ীদের শতভাগ মার্জিনে এলসি খুলে গাড়ি আমদানি করতে হচ্ছে, যা অনেক ব্যবসায়ীর পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না, ফলে গাড়ি আমদানি কিছুটা কমেছে মন্তব্য করেন চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার বদরুজ্জামান মুন্সি।