আফগানদের সামনে টার্গেট ৬২২ রান। তৃতীয় দিন শেষে আফগানিস্তানের সংগ্রহ ২ উইকেটে ৪৫। অর্থাৎ জিততে হলে দুইদিনে আরও ৬১৭ রান করতে হবে। আপাতদৃষ্টিতে যা বলতে গেলে অসম্ভব।
প্রায় অসম্ভব এক লক্ষ্য সামনে রেখে আফগানদের যেমন প্রতিরোধ গড়া দরকার ছিল, সেটা পারেনি। টানা দুই ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে শুরুতেই কোণঠাসা হয়ে পড়ে সফরকারী দল।
ইনিংসের প্রথম বলে উইকেট নেন বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম। তার ডেলিভারি ইব্রাহিম জাদরানের প্যাডে লাগার পর আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। জাদরান (০) অবশ্য রিভিউ নিয়েছিলেন। কিন্তু কাজ হয়নি। দেখা যায় বল সরাসরি তার লেগ স্টাম্পে আঘাত করতো।
পরের ওভারে আরেক পেসার তাসকিন আহমেদের আঘাত। এবার তার দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ব্যাট চালিয়ে উইকেটরক্ষকের ক্যাচ আবদুল মালিক (৫)।
আফগান অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শহীদির চেহারায় আত্মবিশ্বাসের ছাপ ছিল। কিন্তু তাকে ফিরতে হয়েছে আহত হয়ে। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে তাসকিন আহমেদের তৃতীয় বলটি ভেবেছিলেন বাউন্সার হবে। গতি বুঝতে না পেরে আগেই বসে পড়েন শহীদি। কিন্তু সেই ডেলিভারি খুব বেশি উঠেনি। সরাসরি গিয়ে আঘাত করে আফগান দলপতির হেলমেটে। পরে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে শহীদি (১৩) মাঠ থেকে উঠে গেছেন।
এরপর রহমত শাহ আর নাসির জামাল বাকি সময়টা কাটিয়েছেন বুক ধুঁকপুক নিয়ে। রহমত ১০ আর জামাল ৫ রানে অপরাজিত আছেন। আলোক স্বল্পতায় নির্ধারিত সময়ের একটু আগে তৃতীয় দিনের খেলা বন্ধ করে দেন আম্পায়াররা।
এর আগে মিরপুর টেস্টে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেটে ৪২৫ রান তোলার পর অধিনায়ক লিটন দাস থামার সিদ্ধান্ত নেন। ফলে বাংলাদেশের লিড দাঁড়িয়েছে ৬৬১ রানের। অর্থাৎ এই টেস্টে জিততে হলে ৬৬২ করতে হবে আফগানদের। যদিও টেস্টে সর্বোচ্চ রান তাড়ার বিশ্বরেকর্ড ৪১৮ রানের।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করেন দুজন-নাজমুল হোসেন শান্ত আর মুমিনুল হক। শান্ত ১২৪ করে ফিরলেও মুমিনুল শেষ পর্যন্ত ১২১ রানে অপরাজিত থাকেন। ১২ চার আর ১ ছক্কায় সাজানো তার ইনিংসটি। ৮১ বলে ৮ বাউন্ডারিতে ৬৬ রানে অপরাজিত থাকেন লিটন।
গত বছর ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে ৮৪ রানের একটি ইনিংস খেলেছিলেন মুমিনুল হক। তবে সর্বশেষ সেঞ্চুরি করেছিলেন, ২০২১ সালের ২১ এপ্রিল পাল্লেকেলেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এর মধ্যে ১৩টি টেস্ট খেলেছেন মুমিনুল। নেতৃত্বে থাকা অবস্থায় শেষ দিকে তো নিজের ফর্মই হারিয়ে ফেলেছিলেন।
১২৩ বল খেলে সেঞ্চুরির মাইলফলকে পৌঁছান তিনি। সেঞ্চুরির পথে ১২টি বাউন্ডারি মারেন মুমিনুল। তার সঙ্গে হাফসেঞ্চুরির মাইলফলকে পৌঁছে যান অধিনায়ক লিটন কুমার দাসও। ৫৩ বলে ৮টি বাউন্ডারি মেরে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক।
এর আগে নাজমুল হোসেন শান্ত সেঞ্চুরির পর নিজের ইনিংসকে খুব বেশি বড় করতে পারেননি। প্রথম ইনিংসে করা ১৪৬ রান ছোঁয়ার আগেই ফিরে যান সাজঘরে। তার ব্যাট থেকে আসে ১২৪ রানের ইনিংস। জহির খানের বলে আবদুল মালিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান চলতি টেস্টের সবচেয়ে সফলতম ব্যাটার।
২৭৪ রানে নাজমুল আউট হওয়ার পর অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমও মাঠে নেমে থিতু হতে পারেননি। মাত্র ৮ রান করে সেই জহির খানের বলে ইবরাহিম জাদরানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি। ২৮২ রানের মাথায় পড়ে বাংলাদেশের চতুর্থ উইকেট।
এর আগে কি অসাধারণ এক জুটি গড়ে তুলেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত এবং জাকির হাসান। অথচ, সেই জুটিরই কিনা যবনিকাপাত ঘটলো একটি ঝুঁকি নিতে গিয়ে রানআউট হওয়ার মধ্য দিয়ে। ১৭৩ রানের বিশাল এক জুটি গড়ার পর রানআউটে কাটা পড়ে বিদায় নেন জাকির ।। ৭১ রানের এক অনবদ্য ইনিংস খেলেছেন তিনি।
হাশমত উল্লাহ শহিদির করা ৩৫তম ওভারের ৩য় বলে নাজমুল হোসেন শান্ত বাউন্ডারি হাঁকানোর চেষ্টা করেন। নাসির জামাল বলটি দারুণ ক্ষিপ্রতায় বাউন্ডারি বাঁচান। বল কুড়িয়ে ফেরত পাঠান ইবরাহিম জাদরান। এরই মধ্যে তৃতীয় রান নিতে যান শান্ত। কিন্তু জাকির ক্রিজে পৌঁছার আগেই স্ট্যাম্প ভেঙে দেন আফসার জাজাই। ৯৫ বল খেলে ৭১ রান করে আউট হন জাকির।
প্রসঙ্গত, প্রথম ইনিংসে ৩৮২ রানে অলআউট হয়ে গেলেও আফগানদের দেড়শও করতে দেয়নি বাংলাদেশের বোলাররা। ১৪৬ রানে অলআউট করে দিয়ে প্রথম ইনিংসেই লিড নেয় ২৩৬ রানের।
দ্বিতীয় দিন শেষ বিকেলেই বাংলাদেশের লিড দাঁড়িয়েছিল ৩৭০ রান। ১ উইকেট হারিয়ে ১৩৪ রান নিয়ে দিন শেষ করে টাইগাররা। তৃতীয় দিন সকালে ব্যাট করতে নেমে আগের দিনের দৃঢ়তাই দেখিয়েছেন শান্ত এবং জাকির।
এর আগে টেস্টের প্রথম দিন টস হেরে ব্যাট করতে নেমেছিলো বাংলাদেশ। নাজমুল হোসেন শান্তর অনবদ্য ১৪৬ রান এবং মাহমুদুল হাসান জয়ের ৭৬ রানের ওপর ভর করে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ৩৮২ রান। আফগানিস্তানের নিজাত মাসুদ নেন ৫ উইকেট।
জবাব দিতে নেমে আফগানদের কোনো ব্যাটার ৪০ এর ঘরও স্পর্শ করতে পারেনি। ১৪৬ রানে অলআউট হয়ে যায় তারা। ৪ উইকেট নেন এবাদত হোসেন। ২টি করে উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম, তাইজুল ইসলাম এবং মেহেদী হাসান মিরাজ।