বয়স তার চল্লিশের ঘরে। কপালে চিন্তার রেখা নিয়ে বাজারের দোকানে ঘুরছেন চাকরিজীবী সাদিক হোসেন। শাকসবজির দোকানে গিয়ে দাম জানতে চাইলেন। আজ শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) চট্টগ্রামের রিয়াজুদ্দিন বাজারে এ দোকান ও দোকান ঘুরে সবজি কিনতে কিনতে বললেন— ‘মাছ ও মাংস খাওয়া কমিয়ে দিয়েছি বলা যায়’।
‘প্রতি সপ্তাহের মতো মাংস রান্নার আয়োজন হলেও শাক সবজি দিয়ে দুপুরের আয়োজন করেছেন ঘরের কর্ত্রী।’যোগ করেন তিনি।
তিনি প্রতিবেদকে বলেন, গত মাসের ৩০ তারিখ বেতন পেয়েছিলাম। আজ মাসের প্রায় অর্ধেক শেষ। বেতনতো ১৬ তারিখের মধ্যেই শেষ। মাসে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে ৪ জনের পরিবার চালানো কঠিন হয়ে গেছে। মূল্যের উর্ধ্বগতির ফলে আমাদের মতো মধ্যবিত্ত মানুষ কেবল বোবাকান্নায় মরছে প্রতিনিয়ত।
তিনি আরও বলেন, বছরের শেষ হওয়ার আগে গত মাসে জমিদার ভাড়া বাড়িয়েছে ২ হাজার। ফলে বেতনের অর্ধেক টাকা এখন দিতে হচ্ছে চারটি দেয়াল আর একটি ছাদের জন্য।
বর্তমানে, সাদিকের মতো নগরের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারে মাস চালাতে এখন হিমশিম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে প্রতি মাসে। মাস শেষ জমে যায় দেনার পাহাড়। বেতন না বাড়লেও খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ, বাড়ি ভাড়াসহ সংসারের অন্যান্য খরচ মেটাতে নাভিশ্বাস অবস্থায় পড়েছেন অনেকে।
শুক্রবার নগরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, সবজির দাম কিছুটা হাতের নাগালে। গত রাতের শীতকালীন বৃষ্টির ফলে দাম কমেছে শাঁক সবজির। প্রতি কেজি ফুলকপি ৩০টাকা, বাঁধাকপির দাম ২০টাকা, শিম প্রতি কেজি ৬০টাকা, মাঝারি আকারের একটি লাউয়ের দাম ৮০ টাকা, বড় হলে ১০০ টাকাও বিক্রি হচ্ছে। মুলা, পেঁপে, ও শালগম ছাড়া প্রায় সব ধরনের সবজি কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, আমিষ জাতীয় পণ্যে দামের ক্ষেত্রে কমেনি উত্তাপ। কেজিপ্রতি বেড়েছে ৬ টাকা পর্যন্ত। ভোটের আগে যে গরুর মাংস ৬৫০ টাকা কেজিতে নেমেছিল, তা এখনি আবার ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। সোনালি জাতের মুরগির দামও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকায়।
অন্যদিকে আটা-ময়দা ও ডালের দাম এক লাফে কেজিতে ১০ টাকা ও তেলের দাম লিটারপ্রতি ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ডিম ডজন প্রতি বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকায়। খুচরা বাজারে ফার্মের লাল ডিম ১৩৫ টাকা, সাদা ডিম ১৩০ টাকা।
এদিকে নির্বাচনের পর থেকে চালের বাজার চড়া। নগরের খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা যায়, বস্তা প্রতি চালের দাম বেড়েছে ৪ থেকে ৫ টাকা। খুচরা বাজারে ৫০ কেজি মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২শ টাকা, কাটারি ৩ হাজার ৩শ টাকা, জিরাশাইল ৩৪শ টাকা, বেতি চাল ২৭শ টাকা, গুটি স্বর্ণা ২৩শ টাকা, গুটি ২৫শ টাকা।
চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতি সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম বলেন, কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের ধান মজুত করার ফলে আমানের মওসুমে বাজারে এখন চালের দাম বাড়তি। আগে প্রতিদিন চট্টগ্রাম ১০০ ট্রাক আসলেও এখন নেমে এসেছে ৩০ থেকে ৪০ ট্রাকে।