বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘আমেরিকার দেওয়া স্যাংশনে আমরা লজ্জায় মুখ দেখাতে পারি না। আর তারা বলেন, “আমরা ভয় পাই না।” এমন ভয় পেয়েছে, তাদের হাঁটু কাঁপতে শুরু করেছে। কারণ তাদের সবকিছুই তো বিদেশে। টাকা পাচার করেছে বিদেশে। এইবার যদি ভোট আবার কারচুপি করতে যাও, যদি দিনের ভোট রাতে করো, তাহলে তোমাদের রেহাই নেই।’
বুধবার (১৪ জুন) বিকালে চট্টগ্রাম নগরীর কাজির দেউড়ি মোড়ে ‘দেশ বাঁচাতে তারুণ্যের সমাবেশ’ শীর্ষক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল এ সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশে তরুণদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যে বাংলাদেশকে একসময় বলা হতো উন্নয়নের রোল মডেল, সেই বাংলাদেশকে এখন বলা হচ্ছে মরীচিকা। বরিশালের নির্বাচনে চরমোনাই পীরকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার গায়ে হাত তোলা হয়েছে। মেরে রক্ত বের করে দিয়েছে। আজ স্বাধীনতাকে রক্ষা করার সময় এসেছে। স্বাধীনতা আজ বিপন্ন। বাংলাদেশের মানুষের ভবিষ্যৎ আজ বিপন্ন। এই বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে। তরুণ, যুবক, ছাত্রদের এগিয়ে আসতে হবে। এই সরকার জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। তারা জনগণের ওপর স্টিম রোলার চালাচ্ছে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া এখন জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। সরকার তাকে অন্যায়ভাবে, মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে আটক করে রেখেছে। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। তাকে কারাগারে অনেকদিন আটকে রাখা হয়েছিল। বার বার বলেছি, “তাকে মুক্তি দিন।” আমরা জানি না তাকে স্লো পয়জনিং করা হয়েছে কিনা। কারণ তিনি এখন যতটা অসুস্থ হয়েছেন, ততটা অসুস্থ হওয়ার কথা নয়। তাকে আবার হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছে।’
মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সামনে বলেন, এ দেশে নাকি গণতন্ত্র আছে। এ দেশে নাকি সুষ্ঠু ভোট হয়। অনেক হয়েছে, আপনি আমাদের অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছেন। আমাদের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। আমরা কোর্টে যেতে পারি না। কোর্টে গেলে সরাসরি জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। মিথ্যা আর গায়েবি মামলা দিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর হাইকোর্টে যাই, আগাম জামিন নিয়ে নিম্ন আদালতে গেলে আবার জেলে পাঠানো হয়। সেটিই শেষ না, জামিন নিয়ে বের হলে আবার মামলা দেওয়া হয়। আমাদের ৪০ লাখ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে।
‘আমাদের অনেক নেতাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। মিথ্যা মামলায় জেলে রাখা হয়েছে। গুম করা হয়েছে। চট্টগ্রামের ছাত্রদল নেতা নুরুল আলম নুরুকে অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বাঁচাসহ চট্টগ্রামের অনেক নেতাকর্মী গুম হয়েছেন। বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলীকে গুম করা হয়েছে। আজ ১২ বছর হয়েছে তার খোঁজ নেই। তার বড় ছেলে ব্যারিস্টার হয়েছে। ছোট মেয়েটির তখন ছয় বছর বয়স ছিল। এখন ১৮ বছর হয়েছে। এখনও তারা বাইরের দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে, বাবা কখন ফিরবে।’
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মানুষ এখন বাজারে যেতে পারে না। বাজারে জিনিসপত্রের দামে আগুন। চাল, পেঁয়াজ, সবজি, লবণের দাম বেড়েছে। এমনকি ডিম-মুরগির দামও বেড়েছে। তারপরও তারা বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ খুব ভালো আছে।” জনগণের পকেট কেটে তারা তো ভালো আছে। আর আমরা সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করে দিন যাপন করছি।’