টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মানেই যেন চার-ছক্কার বৃষ্টি। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট আসার পর জনপ্রিয়তা বেড়েছে ২০ ওভারের ক্রিকেটের। বিনোদনের খোরাক পেতে লিগগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকেন সমর্থকরা। ২০১২ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) যাত্রা শুরু হলেও এখনও অন্য সবার মতো করে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে যেতে পারেনি। তবুও বিপিএলের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনেন বাংলাদেশের সমর্থকরা। আগামী ১৯ জানুয়ারি পর্দা উঠছে বিপিএলের ১০তম আসরের। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ক্রিকফ্রেঞ্জির আয়োজনে আপনাদের জানানো হবে কে কেমন দল সাজিয়েছে, শক্তিমত্তায় কারা এগিয়ে, কারাই বা পিছিয়ে। এবারের পর্বে থাকছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ফ্র্যাঞ্চাইজির ব্যবচ্ছেদ।
বিপিএলের ইতিহাসে কখনোই শিরোপা জিতেনি চট্টগ্রামের কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি। এর আগে একবারই ফাইনাল খেলেছিল দলটি। গেল আসরে অবশ্য আরও ভয়াবহ ছিল চট্টগ্রামের পারফরম্যান্স। লিগ পর্বের ১২ ম্যাচে মাত্র তিনটিতে জিতে সাত নম্বরে থেকে আসরে ইতি টানে তারা।
এবারের মৌসুমে অবশ্য সেই ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে চায় চট্টগ্রাম। সেটার ইঙ্গিত ইতোমধ্যেই দিয়েছে তারা। এবারের মৌসুমে ম্যানেজমেন্টে ব্যাপক রদবদল এনেছে ফ্র্যাঞ্চাাইজিটি। এমনকি দলের খেলোয়াড় তালিকাটাও বদলে ফেলেছে তারা। গত আসরের বাজে পারফরম্যান্সে এবার সবার আগে নাম কাটা পড়েছে হেড কোচ জুলিয়ান উড ও ম্যানেজার ফাহিম মুনতাসিরের।
এবার দলটি সবার আগে ভরসা রেখেছে দেশীয় কোচ তুষার ইমরানের ওপর। গত মৌসুমের অধিনায়ক শুভাগত হোম, অলরাউন্ডার জিয়াউর রহমান এবং বাঁহাতি স্পিনার নিহাদউজ্জামানকে অবশ্য রিটেইন করেছে তারা। এবারও দলটির নেতৃত্বে শুভাগত থাকবেন কিনা সেটা অবশ্য এখনও ঘোষণা করেনি তারা।
ড্রাফট এবং সরাসরি প্লেয়ার সাইনিং দেখে বোঝা গিয়েছে, চট্টগ্রাম বিদেশি খেলোয়াড়দের উপরই নির্ভর করতে চাচ্ছে। টপ অর্ডারে দলটির এবারের ভরসা পাকিস্তানের মোহাম্মদ হারিস। ২২ বছর বয়সী এই তরুণের টি-টোয়েন্টি স্ট্রাইক রেট ১৪৬.৬১! নিঃসন্দেহে তার আগ্রাসী মনোভাব কাজে লাগাতে চাইবে দলটি। দলকে টেনে নেয়ার জন্যে আবদুল্লাহ শফিকের মতো বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাটারও আছেন এই দলে। পুরো আসরে একটানা রান করে যাওয়ার মতো আরেকজন ‘রান মেশিন’ কুশল মেন্ডিসকেও দলে ভিড়িয়েছে তারা।
টপ অর্ডারের শক্তি বাড়াতে আরেক লঙ্কান আভিস্কা ফার্নান্ডোও থাকছেন চট্টগ্রামে। আফগান হার্ড হিটার নাজিবউল্লাহ জাদরান এবং আয়ারল্যান্ডের অলরাউন্ডার কার্টিস ক্যাম্ফারকেও দলে ভিড়িয়েছে চট্টগ্রাম। ব্যাটিং সামর্থ্য দিয়ে এই দুজন ক্রিকেটারই দলটির ‘এক্স-ফ্যাক্টর’ হতে পারেন। বিশেষ করে ইনফর্ম আইরিশ ক্যাম্ফারের ডেথ বোলিং সামর্থ্যও কাজে লাগাতে চাইবে দলটি। একইরকম সার্ভিস দিতে পারেন জিয়াউর রহমানও। ছয়ে নেমে দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি কয়েক ওভার বোলিং করে দলের সঠিক কম্বিনেশন গড়তে চাইবেন তিনি।
ব্যাক-আপ হিসেবে ইংলিশ হার্ডহিটার ব্যাটার স্টিফেন স্কিনাজিও আছেন এই দলে। যদিও উপমহাদেশের কন্ডিশনে তিনি কতোটা মানিয়ে নিতে পারেন সেটাই দেখার বিষয়। এদের পাশাপাশি দলটিতে স্থানীয় ব্যাটার হিসেবে আছেন দুই তরুণ ব্যাটার তানজিদ হাসান তামিম এবং শাহাদাত হোসেন দিপু। দুজনই চাইবেন নিজেদের মেলে ধরতে। বিদেশি ব্যাটারদের সঙ্গে একটু তাল মেলাতে পারলে জয়ের ‘মোমেন্টাম’ পেয়ে যেতে পারে সাগর পাঁড়ের দলটি। বোলিংয়ে দলটিকে আস্থা যোগাবেন দেশীয় পেসার শহীদুল ইসলাম। সঙ্গে শুভাগত হোমের স্পিন তো আছেই। ব্যাট হাতে শেষদিকে ক্যামিও খেলতে পারেন শুভাগত। আর রিটেইন করা স্পিনার নিহাদুজ্জামান যদি গত আসরের মতো চমকে দেন তাহলে অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো চট্টগ্রাম সহজেই ‘চ্যালেঞ্জ’ জানাতে পারে।
চট্টগ্রামের বোলিংয়ে অবশ্য একেবারেই বিদেশি ক্রিকেটারের ওপর নির্ভরতা নেই। ইনজুরি কাটিয়ে ফেরা পাকিস্তানি ফাস্ট বোলার মোহাম্মদ হাসনাইনকে দলে নিয়েছে চট্টগ্রাম। লম্বা সময় ইনজুরিতে কাটানো হাসনাইন চাইবেন এই আসর দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে। সেক্ষেত্রে তিনি কতোটা সফল হন- সেই অপেক্ষা সময়ের।
দলটির দেশীয় পেসারদের তালিকায় আছেন আল আমিন হোসেন এবং সালাউদ্দিন শাকিল। ঘরোয়া ক্রিকেটে বরাবরই সফল তারা। কিন্তু বিপিএলের মতো বড় মঞ্চে নিজেদের কীভাবে মেলে ধরেন সেটাই দেখার বিষয়। বিপিএলের নিয়ম অনুযায়ী দলটি চারজন বিদেশি ক্রিকেটারই খেলাতে পারবে। সেক্ষেত্রে দেশি ক্রিকেটাররা পারফর্ম না করতে পারলে সমস্যায় পড়তে পারে চট্টগ্রাম।
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স-
রিটেইন- শুভাগত হোম, জিয়াউর রহমান, নিহাদুজ্জামান।
ডিরেক্ট সাইনিং- শহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ হারিস, নাজিবউল্লাহ জাদরান, স্টিফেন স্কিনাজি ও মোহাম্মদ হাসনাইন, আবদুল্লাহ শফিক।
ড্রাফট থেকে- তানজিদ হাসান তামিম, আল আমিন সিনিয়র, সৈকত আলী, ইমরানউজ্জামান, কার্টিস ক্যাম্ফার, বিলাল খান, শাহাদাত হোসেন দিপু, সালাউদ্দিন শাকিল।