চট্টগ্রামে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনার এক বছর আজ (রোববার)। এখনও আহত অনেকেই পাননি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ। হাত-পা কিংবা চোখ হারিয়ে টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। ডিপো কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা। শ্রম আইন অনুযায়ী টাকা দেয়ার কথা থাকলেও প্রতিশ্রুতি রাখা হয়নি বলে অভিযোগ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোরও।
২০২২ সালের ৪ জুন। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে প্রাণ যায় অর্ধশতাধিক মানুষের। আহত হন দুই শতাধিক মানুষ।
ঘটনার দিন ট্রাকে করে ডিপোতে মালামাল নিয়ে গিয়েছিলেন তারেক। হঠাৎ বিস্ফোরণে ঝলসে যায় তার ডান হাত ও কোমর। ওইদিন গাড়িতে মালামাল তুলছিলেন কবির। বিস্ফোরণে তার হাতের চার আঙুল উড়ে যায়। চার মাস চিকিৎসা নেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
দুর্ঘটনার ঠিক আগমুহূর্তে বিএম ডিপোর ভেতরে রহমানিয়া হোটেলে কাজ করছিলেন নুর হোসেন। বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন তিনি। নষ্ট হয়ে যায় বাঁ-চোখটি। এই তিনজন ছাড়াও অনেকে আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। কিন্তু তাদের কেউই ডিপো কর্তৃপক্ষ থেকে পাননি সাহায্য।
ক্ষতিগ্রস্ত তারেক বলেন, ‘আজ এক বছর হলো। এখনও আমরা কোনো ক্ষতিপূরণ পাইনি।’
আরেক ক্ষতিগ্রস্ত কবির বলেন, ‘ডিপোর ম্যানেজমেন্টে কল দিয়ে যোগাযোগ করলে তারা বারবারই দিবে দিবে বলে আশ্বাস দিচ্ছে। তবে কোন দিন দেবে সে বিষয়ে কিছু বলে না।’
নুর হোসেন বলেন, ‘ডিপো থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনি। মেডিকেলে ভর্তি থাকাকালে আত্মীয়স্বজন দেখতে গিয়ে কিছু টাকা-পয়সা দিয়েছে। তা দিয়ে এই ক’দিন কষ্টে জীবনযাপন করেছি। এখন সেটাও নেই।’
কোনো সাহায্য না পাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন আহত অনেকেই।
আহতরা জানান, বাইরের মানুষ তাদের জায়গা থেকে সাহায্য করেছে। কিন্তু যাদের কাজে জীবনের আজ এ পর্যায়ে তারাই রাখছে না কোনো খবর। তাদের সব কাগজপত্র জমা নিলেও সাহায্যের কোনো খবর নেই। এমনকি ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে কি না, তা-ও জানা নেই তাদের।
শ্রম আইন অনুসারে সব আহত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দেয়া বাধ্যতামূলক হলেও দুর্ঘটনার পর বিএম ডিপো যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার কোনো কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি বলে দাবি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের।
সংস্থাটির প্রোগ্রাম অফিসার ফজলুল কবির মিন্টু বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন ও বিএম ডিপো যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা রক্ষা করা হয়নি।
বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কথা বলতে রাজি হয়নি।