খন্ডিত দেহ উদ্ধারের পর অবশিষ্ট ছিল মাথা। আর এই মাথার খোঁজে মাঠে নেমেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই); বলছিলাম চট্টগ্রামে পরিবারের হাতে খুন হওয়া বাঁশখালীর সেই হাসান আলীর কথা। হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে প্রথম থেকে হাতের আঙ্গুলসহ দেহের কয়েকটি অংশ লাগেজে ভরে ঘাটের পাড়ে সড়কের ওপর ফেলে রাখা হয়েছিল। দেহের বাকি অংশ খন্ড খন্ড করে বস্তায় পেঁচিয়ে ফেলা হয় বিভিন্ন জায়গায়। প্রথমে লাগেজ উদ্ধারের পর আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে পিবিআই। ক্রমান্বয়ে নিহতের মরদেহের সব খন্ডিত অংশ উদ্ধার হলেও ঘাড় থেকে আলাদা করা মাথার হদিস এখনও পায়নি পিবিআই।
০২ অক্টোবর, সোমবার নিহত হাসানের পুত্রবধূ আনারকলিকে নিয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে কাটা মাথার খোঁজে তল্লাশি চালায় পিবিআই।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের পরিদর্শক মো. ইলিয়াস খান জানান, গত শুক্রবার হাসান আলী হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত তার পুত্রবধূ আনারকলিকে কক্সবাজারের মহেশখালী থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন শনিবার আদালতে হাজির করলে ৩ দিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর করে আদালত। আনারকলি হাসান হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত নয়। তবে তিনি হত্যার আলামত গোপনে সহযোগী।
ইলিয়াস খান বলেন, প্রথমে তাকে নিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো দা বাসার পাশে থেকে উদ্ধার করা হয়। এরপর রোববার ও সোমবার তাকে নিয়ে ভুক্তভোগী হাসানের কাটা মাথা উদ্ধারে অভিযানে যাই। সাগরের বিভিন্ন স্থানে তন্নতন্ন করেও ভুক্তভোগীর কাটা মাথার সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরদিন (সোমবার) সকালে আবার অভিযানে যাওয়া হয়। তবে জোয়ারের কারণে দুপুরে তল্লাশি কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়। মঙ্গলবারও তল্লাশি অভিযান চালানো হবে।
তিনি আরও জানান, মূলত তার স্বামী অর্থাৎ হাসানের ছোট ছেলে সফিকুর রহমান জাহাঙ্গীরের বাসায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এরপর হাসানের মরদেহ খণ্ডবিখণ্ড করে আনারকলির লাগেজে করে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর আরেকটি থলেতে করে কাটা মাথা ফেলে দেওয়া হয়। এছাড়া শরীরের কিছু অংশ আকমল আলী রোডের একটি খালে ফেলে দেওয়া হয়।
এর আগে হাসান আলীর মরদেহের আঙুলের ছাপ নিয়ে তার পরিচয় শনাক্ত করে পিবিআই। গত ২৩ সেপ্টেম্বর সকালে নগরের ইপিজেড থানার আকমল আলী রোড এলাকায় একটি বস্তা থেকে তার শরীরের অবশিষ্ট অংশও উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তার স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম ও সন্তান মোস্তাফিজুর রহমানকে আটক করে পিবিআই। এর আগে গত ২১ সেপ্টেম্বর রাতে লাগেজের ভেতর থেকে মরদেহের হাত-পা ও আঙুলের ৮ টুকরা খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করে পতেঙ্গা থানা পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেছিল। ঘটনা তদন্তে কাজ শুরু করে পিবিআই।
পিবিআইকে জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, মো. হাসান দীর্ঘ ২৭ বছর আলাদা ছিলেন। সম্প্রতি তিনি স্ত্রী-সন্তানের কাছে ফিরে আসেন। তবে এর আগে হাসানকে মৃত উল্লেখ করে সন্তান মোস্তাফিজুর জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে। তিনি ফিরে আসায় সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এর জেরে গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে ইপিজেড থানার আকমল আলী সড়কের জমির ভিলার ৭ নম্বর বাসায় স্ত্রী ও সন্তান মিলে তাকে হত্যা করে। এরপর মরদেহ কেটে টুকরো করে লাগেজ ও বস্তায় ভরে পতেঙ্গা ও আকমল আলী রোডের পাশে ফেলে দেওয়া হয়।