Google search engine
প্রচ্ছদUncategorizedমাননীয় প্রধানমন্ত্রী : টানেলের শহরে আপনাকে স্বাগতম

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী : টানেলের শহরে আপনাকে স্বাগতম

মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম »

খৃষ্টপূর্ব কয়েকশত বছর আগে এক চৈনিক পরিব্রাজক চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌর্ন্দয বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছিলেন, “বিউটি রাইজিং ফ্রম মিস্ট অ্যান্ড ওয়াটার। ইতিহাসের পথ পরিক্রমায় এই চট্টগ্রামকে সময়ে সময়ে চৈনিক, আরবীয় আর পর্তগীজরা পোর্ট গ্রান্ডে হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন।

ইতিহাস, ঐতিহ্য – বিপ্লব আর বিদ্রোহে চট্টগ্রাম এই উপ-মহাদেশে সব সময় অগ্রণী। মহাত্মা গান্ধীর কণ্ঠে তারই প্রতিধ্বনি “চিটাগাং টু দ্য ফোর” অর্থাৎ চট্টগ্রাম সর্বাগ্রে। ১৮৫৭ সালে এই চট্টগ্রামের মাটিতে ৩৪ ইস্ট বেঙ্গল ইনফেন্ট্রি ব্যাটালিয়নের সৈন্যরা বুকের শাণিত ধারায় স্বাধীনতার জন্য বৃটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের মশাল জ্বালিয়েছিল। আরো পরে স্বাধীনতার ডাক দিয়ে এই চট্টগ্রামের জালালাবাদ পাহাড়ে স্বাধীনতার পতাকা উড়িয়েছিলেন মাস্টার দা সূর্য সেন। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর কবিতা চট্টগ্রাম: ১৯৪৩ এ তাই স্পন্দিত বুকে লেখেন “জানি তুমি এখনো উদ্দাম/হে চট্টগ্রাম” ।

চট্টগ্রাম শহর প্রকৃতির এক অপার দান। পৃথিবীর বিখ্যাত শহরগুলোর যে সৌন্দর্য, যে প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে চট্টগ্রামেরও রয়েছে তার সব । যেমন হাডসন নদীর এপার ওপার ঘিরে গড়ে উঠেছে নিউ ইর্য়ক, সীন নদীর এপার ওপার ঘিরে গড়ে উঠেছে প্যারিস, টেমস এর এপার ওপার ঘিরে লন্ডন, ভলগার এই তীর আর ঐ তীর ধরে বেড়ে উঠেছে মস্কো। এরকম পৃথিবীর প্রায় সব সৌকর্যম-িত শহরগুলো নদীকে ঘিরে গড়ে উঠেছে অনন্তকাল ধরে। চট্টগ্রামও এর ব্যতিক্রম নয়। কর্ণফুলি নদীর এপার ওপার জুড়ে চট্টগ্রাম শহরের ব্যাপ্তি। তবে চট্টগ্রাম শহর একদিক থেকে ব্যতিক্রম, শহরটি চরম অবহেলিতও ছিল। চট্টগ্রাম শহরের উত্তর অংশ অর্থাৎ কর্র্ণফুলি নদীর উত্তর পার আলোঝলমল আর দক্ষিণ পার অন্ধকারাচ্ছন্ন! কর্ণফুলির উত্তর পার সিটি কর্পোরেশনভুক্ত আর দক্ষিণ পার অজ পাড়া-গ্রাম।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার দূরর্দশী নেতৃত্ব, অতুলনীয় সাহস আর এই শহরের প্রতি মমত্ববোধ কর্ণফুলির দুপারকে আজ একই ধারায় প্রবাহিত হওয়ার, একই উন্নয়নের ছোঁয়ায় আলোকিত হবার সুযোগ অবারিত করে দিয়েছে। বিদ্যমান ব্রিজের পিলার কর্ণফুলির বুকে পলি জমে উঠার অন্যতম এক কারণ হয়ে এর নাব্যতাকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। সেখানে কর্ণফুলির তলদেশের টানেল এ নদীকে বাঁচিয়েছে অনাদিকালের জন্য।

কর্ণফুলির এপার ওপার আজ নবর্নিমিত টানেলের মাধ্যমে উন্নয়নের অভিন্ন সুতোয় পরস্পরকে বেঁধেছে। এই টানেলের মাধ্যমে কর্ণফুলির দক্ষিণ পার ব্যাপক শিল্পায়ন তথা উন্নয়নের মহোৎসবে মেতে উঠবে নিঃসন্দেহে। কর্ণফুলি টানেল চট্টগ্রামের দক্ষিণ অঞ্চলের অফুরন্ত সম্ভাবনাকে বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের সাথে সম্পৃক্ত হতে নতুন দ্বার খুলেছে। দক্ষিণ চট্টগ্রাম এখন টানেলের মাধ্যমে মেরিন ড্রাইভ হয়ে যেমন ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের সাথে সংযুক্ত হবে তেমনি দক্ষিণে মাতারবাড়ির গভীর সমুদ্রবন্দরের সাথে এর সংযুক্তি নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশের শিল্প সম্ভাবনায় এক বৈপ্লবিক পরির্বতন বয়ে আনবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এখনই সময় কর্ণফুলির দক্ষিণ অঞ্চলকে একটি পরিকল্পিত শহর/শিল্পাঞ্চল হিসাবে গড়ে তোলার। অন্যথায় কালক্ষেপণে যত্রতত্র অপরিকল্পিত স্থাপনা এ অপূর্ব অঞ্চলকে জঞ্জালের কবলে ঠেলে দিতে পারে। পদক্ষেপ হিসাবে ঢাকার আদলে অচিরেই চট্টগ্রামকে দুটি সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম উত্তর এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ ঘোষণা দিয়ে এর মাধ্যমে পরিকল্পিত নগরায়ণের বিষয়টি আপনার সদয় বিবেচনায় রাখতে পারেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার প্রথম প্রধানমন্ত্রীত্বকালে দূরর্দশী আর সাহসী পদক্ষেপে দ্রুততম সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। তারই ফলশ্রুতি আজকের পার্বত্য চট্টগ্রামে উত্তরের সাজেক থেকে দক্ষিণের থানচি পর্যন্ত অপূর্ব যোগাযোগ ব্যবস্থা। এই শান্তিচুক্তির বদৌলতে পার্বত্য চট্টগ্রামের আম-কাঠাল-আনারস-তরমুজ দেশের প্রয়োজন মিটিয়ে রপ্তানির অপেক্ষায়। পার্বত্য চট্টগ্রাম আমাদের পর্যটনের আজ স্বর্ণদ্বার।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি আপনার নেতৃত্ব গুণে এ জাতির জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সমুদ্রের অধিকার আদায় করেছেন। দক্ষিণের সুনীল বিস্তৃত জলরাশি তার বিপুল ঢেউয়ে ঢেউয়ে আজ আমাদের অপার সম্ভাবনার বার্তা দিয়ে যাচ্ছে। সামুদ্রিক মৎস্য, খনিজ ও জ্বালানির উৎস খুঁজে আমাদের অর্থনীতিকে আপনার স্বপ্নের সমান করতে প্রয়োজনে দক্ষ জনবল নিয়োগের মাধ্যমে একটি গতিশীল মন্ত্রণালয় গঠন করতে পারেন।

spot_img
spot_img

এই বিভাগের আরও পড়ুন

চট্টগ্রাম

সারাদেশ

বিশেষ-সংবাদ

বিনোদন