শিখ নেতা হরদিপ সিং নিজার হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে ভারত এবং কানাডার মধ্যে চরম কূটনৈতিক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের অভয় দিয়েছেন কানাডার অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী মার্ক মিলার। চলছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। কূটনীতিক বহিষ্কার থেকে শুরু করে পাল্টা ভ্রমণ সতর্কতা দিয়েছে তারা। সর্বশেষ বুধবার কানাডায় ভারতবিরোধী কর্মকাণ্ড এবং রাজনৈতিক ঘৃণামূলক অপরাধ ও ক্রিমিনাল সহিংসতা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে নিজের নাগরিকদের সতর্ক করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপরই মার্ক মিলার ভারতীয়দের অভয় দিয়েছেন। বলেছেন, তাদের সফরের জন্য কানাডা নিরাপদ। তিনি এ বিষয়ে সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ করেন। এ খবর দিয়েছে কানাডার অনলাইন গ্লোব অ্যান্ড মেইল।
গত ১৮ই জুন কানাডার বৃটিশ কলাম্বিয়ার সারে এলাকায় শিখদের একটি উপাসনালয়ের কার পার্কে দুই আততায়ীর গুলিতে নিহত হন শিখ নেতা হরদিপ সিং নিজার। এ ঘটনায় ভারত সরকারের ‘র’ এজেন্ট জড়িত বলে অভিযোগ তোলে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সরকার। তার সরকারের একটি সিনিয়র সূত্র এরই মধ্যে মিডিয়াকে জানিয়েছেন, এই তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তারা অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।
উল্লেখ্য, হরদিপ সিং নিজার হলেন ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যে নিজেদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ‘খালিস্তান’ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের নেতা। দীর্ঘদিন ধরে তিনি কানাডা বসবাস করছিলেন। ভারতে তিনি মোস্ট ওয়ান্টেড। তাকে হত্যার পর কানাডায় অবস্থানকারী শিখরা দাবি তুলেছেন সেখানে ভারতের কূটনৈতিক মিশন বন্ধ করে দিতে।
এমন উত্তেজনাকর অবস্থা বিশ্ব মিডিয়াকে নাড়া দিয়েছে। সব মিডিয়াতে বিষয়টি ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে। কারণ, কানাডার মতো দেশ অভিযোগ তুলেছে রাষ্ট্র ভারতের বিরুদ্ধে। এর ফলে পাকিস্তানের রাজনীতিকরা ভারতকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বলে অভিহিত করে তার কঠোর সমালোচনা করছেন।
ভারতের ভ্রমণ সতর্কতার জবাবে কানাডার অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ করেছেন। মন্ত্রী মার্ক মিলার সাংবাদিকদের বলেছেন, সবাই জানেন কানাডা কতটা নিরাপদ। গত দুই-তিন দিনের ঘটনাপ্রবাহ এবং গুরুতর অভিযোগের প্রেক্ষিতেও এটা বলা গুরুত্বপূর্ণ যে, সবাইকে শান্ত থাকতে হবে। বিশ্বের মধ্যে কানাডা শুধু সবচেয়ে নিরাপদ দেশের মধ্যে অন্যতমই না, একই সঙ্গে এ দেশটিতে আইনের শাসন আছে। মন্ত্রী স্বীকার করেন হরদিপ সিং নিজারকে হত্যায় ভারত জড়িত থাকার অভিযোগ উত্তেজনা বৃদ্ধি করেছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী (জাস্টিন ট্রুডো) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে খুব পরিষ্কার করে বলেছেন যে, অভিযোগ খুবই গুরুতর। ভারতের সঙ্গে এ নিয়ে অব্যাহত আলোচনা চলছে। একই সঙ্গে অতি আবেগ কাজ করছে। আমরা সবাইকে অনুরোধ করছি শান্ত থাকতে।
ওদিকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সমালোচনা উঠেছে ভারতে। বিরোধী কংগ্রেস পার্টির সিনিয়র আইনপ্রণেতা অভিষেক মানু সিংভি বলেছেন, সন্ত্রাসী হরদিপ সিং নিজারের পক্ষ নিয়েছেন ট্রুডো। এটা চরম লজ্জার। শিখ সম্প্রদায় পাঞ্জাবে যখন খালিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করছে, তখন তাদের সঙ্গে কানাডা সরকার সহাবস্থানে চলে গেছে বলে অভিযোগ তার। ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জাতীয় সেক্রেটারি মানজিন্দার সিং সিরসা বলেন, ট্রুডোর অভিযোগে তিনি বিস্মিত ও হতাশ হয়েছেন। বলেছেন, কিভাবে একজন প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে তথ্যপ্রমাণ ছাড়া এমন অভিযোগ করতে পারেন? যদি তাদের হাতে কোনো তথ্যপ্রমাণ থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তার করা উচিত। ওদিকে নয়া দিল্লির থিংক ট্যাংক অবজার্ভার রিসার্স ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হর্ষ পান্ত বলেন, অকল্পনীয় কাজ করেছে কানাডা। তারা এমন একটি ইস্যু বের করতে পেরেছে, যা বিরোধী দলগুলো এবং বিজেপিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে।
শিখ ফর জাস্টিসের প্রধান এবং হরদিপ সিং নিজারের নিউ ইয়র্কভিত্তিক আইনজীবী গুরপাতওয়ান্ত সিং পান্নুন এরই মধ্যে আগামী সোমবার অটোয়াতে ভারতীয় হাই কমিশন এবং কানাডাজুড়ে যেসব কনস্যুলেট আছে, তার বাইরে শিখদের র্যালি আহ্বান করেছেন। হরদিপ সিং নিজার হত্যায় ভারতকে দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো অভিযোগ করার পরেই শিখস ফর জাস্টিস গ্রুপ ‘ভারত নিপাত যাক’ প্রচারণা শুরু করেছে। একই সঙ্গে তারা অটোয়াতে ভারতীয় দূতাবাস বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। দাবি তুলেছে ভারতীয় হাইকমিশনার সঞ্জয় কুমার বর্মাকে বহিষ্কারের। শিখদের র্যালিতে একটি পোস্টারে লেখা ছিল কানাডায় ভারতীয় মিশন হলো ‘টেরর হাউজেস’।