আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) জারি করা পরোয়ানা অকার্যকর বা প্রত্যাহার হওয়ার আগে যদি ইতালি সফরে যান ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, তাহলে তাকে গ্রেপ্তার করবে দেশটির সরকার। ইতালির প্রতিরক্ষামন্ত্রী গুইদো ক্রোসেত্তো বৃহস্পতিবার এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন।
গাজায় মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গতকাল বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী, সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্ত এবং গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের সামরিক শাখার প্রধান মোহাম্মদ দেইফের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। এ পরোয়ানা জারির কয়েক ঘণ্টা পর ইতালির সম্প্রচার সংবাদমাধ্যম আরএআই টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মন্ত্রী বলেন, “আমি মনে করি, নেতানিয়াহু এবং গ্যালান্তের সঙ্গে হামাসের সামরিক শাখার প্রধানকে এক লেভেলে বিচার করা আইসিসির একটি ভুল। তবে এই পরোয়ানা প্রত্যাহার কিংবা অকার্যকর হওয়ার আগে নেতানিয়াহু কিংবা গ্যালান্ত যদি ইতালি সফরে আসেন, তাহলে বাধ্য হয়েই তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে হবে আমাদের।”
ইতালির প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, “এটা কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়। আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গঠন সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরকারী একটি দেশ। তাই আইসিসির যে কোনো পদক্ষেপ, যে কোনো সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নিতে বাধ্য।
পরোয়ানা জারির পর তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজিনি বলেছিলেন, “আমরা আইসিসিকে সমর্থন করি। তবে আমরা এটিও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে এই আদালতের প্রতিটি সিদ্ধান্ত পদক্ষেপ হবে আইনগত, রাজনৈতিক নয়।”
“পরোয়ানা জারির জেরে আমাদের কী পদক্ষেপ হবে— সে বিষয়ে মিত্রদের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।”
এর আগে গত মে মাসে নেতানিয়াহু, গ্যালান্ত ও দেইফের পাশাপাশি হামাসের তৎকালীন প্রধান ইসমাইল হানিয়া ও গাজার হামাসপ্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন আইসিসির কৌঁসুলি করিম খান।
পরোয়ানা জারির পর সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে করিম খান বলেন, গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার ঘটনায় সিনওয়ার, হানিয়া ও দেইফের বিরুদ্ধে ‘ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ, হত্যা, লোকজন জিম্মি হিসেবে নেওয়া, ধর্ষণ এবং বন্দীদের যৌন নিপীড়নের’ অভিযোগ আনা হয়েছে।
আইসিসির কৌঁসুলি আরও বলেন, নেতানিয়াহু ও গ্যালান্টের বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করা, মানবিক ত্রাণ সরবরাহ করতে না দেওয়াসহ ক্ষুধাকে যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার, যুদ্ধে বেসামরিক লোকজনকে ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তু করা।
গত জুলাই মাসের শেষ দিকে ইরানে এক হামলায় নিহত হন তৎকালীন হামাসপ্রধান হানিয়া। একই মাসে গাজায় বিমান হামলায় দেইফকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করে ইসরায়েল। হানিয়ার পর হামাসের প্রধান হন সিনওয়ার। গত অক্টোবরে মাঝামাঝি গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে লড়াইয়ে নিহত হন সিনওয়ার।