চট্টগ্রামে নগরীতে তিনটি অবকাঠামো প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। প্রকল্পগুলোর ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
রোববার (১৭ নভেম্বর) এসব প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন সিটি কর্পোরেশন মেয়র।
প্রকল্প তিনটির মধ্যে রয়েছে ১৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭ তলা বিশিষ্ট হালিশহর আলহাজ মহব্বত আলী সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন, ২৬নং হালিশহর ওয়ার্ডে ১৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭ তলা কিচেন মার্কেট কাম কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন এবং ৩৭নং ওয়ার্ডের জরিনা মফজল কলেজ সংলগ্ন ২ দশমিক ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রোড ড্রেনসহ উন্নয়ন এর কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন। এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
আলহাজ মহব্বত আলী সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনকালে নৈতিক শিক্ষার ওপর জোরারোপ করে মেয়র বলেন, আমরা যদি নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হই তাহলে সমাজকে আমরা কিছু দিতে পারব না। পড়াশোনা করে আজ আমি ডাক্তার হয়েছি, সব ঠিক আছে। কিন্তু ডাক্তার যখন মানবিক হতে না পারবে, একটা গরিব রোগীকে চিকিৎসা বিনামূল্যে দিতে না পারবে তখন এই শিক্ষার কোনো দাম নেই। একজন শিক্ষক একটা মেধাবী গরিব ছাত্রকে বিনামূল্যে পড়াতে না পাড়লে উনার শিক্ষার কোনো দাম নেই। এভাবে প্রতিটি পেশাতে আমাদেরকে মানবিক যদি হতে হয়, আমাদেরকে যদি সামাজিক হতে হয়, আমাদেরকে যদি সমাজের সত্যিকার দায়িত্ব পালন করতে হয় তাহলে আমাদেরকে অবশ্যই নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে।
শিক্ষা খাতে দেশ পিছিয়ে গেছে দাবি করে ডা. শাহাদাত বলেন, গত ১৬ বছর আমরা দেখেছি শিক্ষার নামে বিভিন্ন ধরনের নৈরাজ্য হয়েছে। চাঁদাবাজি হয়েছে। আমার ছাত্রছাত্রী ভাই-বোনদের বইয়ে বানোয়াট ইতিহাস পড়ানো হয়েছে। এখানে শিক্ষক-শিক্ষিকা যারা আছেন মনে রাখবেন, বিগত সরকারের সময় মাদকাসক্তিতে অনেক ছেলে নষ্ট হয়ে গেছে। অনেকে বিভিন্নভাবে খারাপ ছেলের সংস্পর্শে এসে খারাপ হয়ে গেছে। কিশোর গ্যাং কালচার তৈরি হয়েছে ওই সরকারের আমলে। আপনাদেরকে আমাদের সন্তানদেরকে বাঁচাতে হবে। তাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখবেন। তাদের নখ পরিষ্কার আছে কি না, তাদের চুল ঠিক আছে কি না, হাইজিন মেইনটেইন করছে কি না ছাত্ররা সব চেক করা আপনাদের দায়িত্ব। তাদের সুস্থ নাগরিক হিসেবে গড়তে হবে আপনাদের।
কিচেন মার্কেট কাম কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনকালে মেয়র বলেন, যেহেতু কোনো কমিউনিটি সেন্টার বা বড় মার্কেট এ এলাকায় ছিল না, সেহেতু আমরা চমৎকার একটা মার্কেট এ এলাকায় করে দিচ্ছি। যাতে করে এলাকাবাসীর সুবিধা হয়। এই আধুনিক বিল্ডিং এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে, নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি করবে।
বৃষ্টির পানির ব্যবহারের আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, রেইন ওয়াটার হারভেস্ট সম্বন্ধে আমি আপনাদের কিছু বলতে চাই। রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং মানে বৃষ্টির পানি যেটা পড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়, সেটাকে আমরা একটা বৈজ্ঞানিক উপায়ে ধারণ করে এই পানিটা রিসাইক্লিং করে ব্যবহার করতে পারি। পানির কিন্তু সংকট হবে ভবিষ্যতে। এজন্য ওয়াসার পানি আমরা নষ্ট করব না। আমরা যত্রতত্র এই যে পানি যে নষ্ট করছি এটা কিন্তু আমাদের জন্য পরবর্তীতে গিয়ে সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। কারণ পানি আমাদেরকে সেভ করতে হবে। পানির অপর নাম জীবন। আজ আমরা হয়ত মনে করছি যে পানি তো আছে, দেদারসে খরচ করি। একটা স্টেজে পানির অভাব দেখা দেবে। এখন একটা নলকূপ লাগাতে গিয়ে দেখবেন অনেক গভীরে চলে যেতে হচ্ছে। তার অর্থ হচ্ছে এটা হয়ত গুড সাইন না। কাজেই পানি যত নিচে যাবে তত মনে করবেন যে ভূগর্ভে পানি কমে যাচ্ছে। ভূগর্ভে পানি কমে যাওয়া, এটা রিস্কি। এজন্য বিল্ডিং নির্মাণের ক্ষেত্রে যে বিল্ডিং কোডগুলো আছে সেগুলো মেনে চলবেন। আপনারা নিয়ম মেনে চললে দেখবেন যে জলাবদ্ধতা হবে না। নেক্সট জেনারেশনের জন্য আপনাদের কথা চিন্তা করতে হবে। শুধু এখন আপনারা সুখী থাকবেন বউ বাচ্চা নিয়ে, এটা চিন্তা করবেন না।