দেশে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ না করে বরং যৌক্তিক সংস্কারের পক্ষে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন বিভিন্ন সংগঠনের সাবেক ও বর্তমান ছাত্রনেতাসহ শিক্ষাবিদরা।
একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে সব রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, ছাত্র রাজনীতি মানে এতোদিন ছিল ফাও খাওয়া, দখলদারত্ব, দলদাস তৈরির মাধ্যম। এটি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ছাত্র রাজনীতি হতে হবে শিক্ষার্থীবান্ধব, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের মাধ্যম। এর জন্য ডাকসুর বিকল্প নেই।
রোববার (২৭ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আয়োজনে ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী ছাত্র রাজনীতি ও শিক্ষার্থীদের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে আলোচনা সভা’য় এ মতামত দেন তারা।
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন- ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক নাসির উদ্দীন, ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের মিডিয়া ও প্রচার সম্পাদক হোসাইন আহমাদ জুবায়ের, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক প্রমুখ।
আওয়ামী লীগ ও তার দোসরদেয় নিষিদ্ধের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সুষ্ঠু রাজনীতির ধারা চালু রাখার বিষয়েও মত দিয়ে ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, গত ৫৩ বছরের রাজনীতি পর্যালোনা করলে দেখা যাবে, ছাত্র অধিকার পরিষদ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগী সংগঠন। আমাদের এমন কোনও নেতা নেই, যাদের গায়ে ছাত্রলীগের নির্যাতনের চিহ্ন নেই। গত বছর এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ওপর হামলা করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্য প্রক্টর ছিলেন গোলাম রব্বানী। তার ইঙ্গিতে ছাত্রলীগের নেতারা ছাত্রদের পেটাতো। তিনি চেয়ে চেয়ে দেখতেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, আমি সূর্যসেন হলের ছাত্র ছিলাম। আমি দেখেছি, কীভাবে কনকনে শীতের রাতে ছাত্রদের হল থেকে বের করে দিতো। ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম না করার কারণে সারা রাত পাশবিক নির্যাতন করতো। ছাত্র রাজনীতির নামে যেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রাম করতে না হয়, সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। রাজনীতি যেন শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের যেন সিটের জন্য কোনও নেতার দ্বারস্থ না হতে হয়, সেটা হল প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক নাসির উদ্দীন বলেন, ছাত্র রাজনীতি চাই কিনা আমি সে প্রশ্নের উত্তরে প্রথমেই বলতে চাই, ছাত্র রাজনীতি দরকার আছে। যদি ছাত্র রাজনীতি না থাকে তাহলে শিক্ষার্থীরা বিগত সরকারের ১৬ বছরের বর্বরতা সম্পর্কে জানতে পারবে না। ছাত্ররাজনীতি যেন শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার অনুকূলে থাকে, তারা যেন প্রথম বর্ষেই হলে সিট পায়, তাদের যেন আবাসন নিয়ে চিন্তা করতে না হয় আমরা এমন ছাত্র রাজনীতি চাই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক জুবায়ের হাসান বলেন, কেমন ছাত্র রাজনীতি চাই এর উত্তরে আমি বলবো, রাজনীতি হবে ছাত্রদের জন্য। শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে কাজ করবে এমন রাজনীতিই শিক্ষার্থীরা চায়। কিন্তু তাদের বিগত সময়ের কালো রাজনীতির ছায়া তাদের ব্রেনওয়াশ করেছে। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের রাজনীতি করতে হবে।
ইসলামি ছাত্র আন্দোলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সহাবস্থান তৈরি করতে হবে। সবাই যেন সব দলের বিরুদ্ধে আলোচনা করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’ এ সময় ডাকসুর কোনও বিকল্প নেই।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক মোজাম্মেল হক বলেন, ৫ আগস্টের আগে ছিল অপরাজনীতি। রাজনীতির নামে ফাও খাওয়া, হল দখল, শিক্ষার্থী নির্যাতন করেছে ফ্যাসিবাদি সংগঠনের দোসর ছাত্রলীগ। আমরা আগামীতে এ ধরনের বর্বরতা দেখতে চাই না। শিক্ষার্থীরা যেন প্রথম বর্ষেই হলে সিট পায়, সেটি আমাদের দেখতে হবে। কোনও রাজনৈতিক দল যেন শিক্ষার্থীদের নিয়ে বাণিজ্য করতে না পারে সেটিও আমাদের দেখতে হবে। রাজনীতি হতে হবে শিক্ষার্থীবান্ধব।