প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ অনুষ্ঠানে ডাক না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। এসময় তিনি বলেন, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জাতীয় পার্টি ও বিএনপি। কিন্তু পরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। বিএনপি মেয়র ইলেকশন ও উপজেলা ইলেকশন তিন ধাপ পর্যন্ত করে- এটাকে বৈধতা দিয়েছে। মানে আমরা অর্ধেক দিয়েছি, তারাও অর্ধেক দিয়েছে। তারপর ২০১৮ এর নির্বাচনে সকলেই এসেছে। আর এই ধরনের নির্বাচন সবাই বৈধতা দিল।
তিন দিনের সফরে শনিবার সন্ধ্যায় রংপুরে গিয়ে জাপা প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদের কবর জিয়ারতের পর তিনি এসব মন্তব্য করেন।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপিসহ অন্যান্য দল মিনিমাম চার বছর পার্লামেন্টে ছিলেন। তাহলে এই সম্পূর্ণ সময় যদি ধরি- তাহলে নির্বাচনি ব্যবস্থায় সকলেই বৈধতা দিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ অনুষ্ঠানে ডাক না পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা আমার কাছে খুবই অদ্ভুত মনে হয়েছে। এটার বিষয়ে আমাদের আপত্তির জায়গা আছে। আমাদের দল মোটামুটি একটা পুরাতন দল বলা যায়। আমাদের দলের ইতিহাস আছে। দেশের উন্নয়নের সঙ্গে, সংস্কারের সঙ্গে আমরা জড়িত ছিলাম। দীর্ঘদিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আছি। রাষ্ট্র পরিচালনায় আমাদের অভিজ্ঞতা আছে।
জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের দোসর তকমা দিয়ে সরকারপ্রধানের কোনো অনুষ্ঠানে না ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জি এম কাদের বলেন, সরকার যাতে সঠিক পথে চলতে পারে, আমাদের যা পরামর্শ চান, যেভাবে চান- আমরা দিব এবং আমরা দিয়ে আসছি। এখন হঠাৎ করে যদি এটা আমাদের না দিতে বলা হয়, না ডাকা হয়- আমাদের তরফ থেকে কোনো আপত্তির কারণ নেই।
তিনি বলেন, আমাদের আপত্তির কারণ যেটা বলছিলাম, সেটা হলো যে- একটি বিষয়ে আমাদের দোষারোপ করে শাস্তি হিসেবে দেখানো হচ্ছে এবং ব্যাপকভাবে এটা প্রচারণা করা হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য কিছুটা হলেও বিব্রতকর হয়েছে।
আওয়ামী লীগ শাসনামলের সহযোগী হিসেবে জাতীয় পার্টিকে দেখা ঠিক নয় বলে মনে করেন জি এম কাদের।
সবশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট বর্জন করা হলে রওশন এরশাদকে দিয়ে ভোট করানো হবে বলে আওয়ামী লীগ চাপ দিয়েছিল বলে দাবি করেন জি এম কাদের। তিনি বলেন, তখন আমরা নির্বাচন ফেয়ার করার গ্যারান্টি দিতে হবে, নাহয় থাকব না বলে জানাই। আমরা কোনো ছাড় চাইনি, আমরা চেয়েছি নির্বাচন যেন নিউট্রাল হয়। শেষ মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে আসার চেষ্টা করলে গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে জোর করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করানো হয়েছে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, মানুষের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্ব- এই তিন বিষয় সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ। এসবের সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতা কিছুটা তো আছেই।
তিনি বলেন, কেউ চাচ্ছে ইলেকশন তাড়াতাড়ি হোক, কেউ চাচ্ছে ইলেকশন পরে হোক, আমরাও চাচ্ছি একটা যৌক্তিক সময়ের পরে ইলেকশন হোক, সংস্কার হওয়ার পরে হওয়া ভাল। এইসব নিয়ে টানাপোড়ন আছে। সেই হিসেবে আমরা মনে করি যে সামনের দিনগুলো এখনও অনিশ্চিত।
জি এম কাদের বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আমার অবদান আছে, আমার দলের অবদান আছে। আমার দলের বেশির ভাগ মানুষ আন্দোলনে ছিল। আমরা জনগণের রাজনীতি করতে চাই। একটি ফ্যাসিবাদের পতনের পরে নব্য ফ্যাসিবাদ দেখতে চাই না, সেটিই আমাদের কাম্য।