নাইজারের সামরিক অভ্যুত্থানের নেতারা দেশটিতে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
শুক্রবার জান্তা জানিয়েছে, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত সিলভা ইত নাইজারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
এক বিবৃতিতে দেশটির জান্তা নিয়োজিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ফ্রান্সের সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে তাদের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফ্রান্স সরকারের পদক্ষেপ ‘নাইজারের স্বার্থ বিরুদ্ধ’।
ফ্রান্সের এসব পদক্ষেপের মধ্যে তাদের রাষ্ট্রদূতের নাইজারের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাতের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যানের বিষয়টিও আছে বলে জানিয়েছে তারা।
এর প্রতিক্রিয়ায় নাইজারের সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্স বলেছে, “অস্ত্রের মুখে সরকারকে হটানোর চেষ্টারতদের এ ধরনের বহিষ্কারাদেশ দেওয়ার কোনো কর্তৃত্ব নেই।”
২৬ জুলাই এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছে নাইজারের সামরিক বাহিনী। কিন্তু ফ্রান্স এই অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করে দেশটির ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজৌমকে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। এই নিয়ে নাইজারের জান্তার সঙ্গে ফ্রান্সের সম্পর্ক নাজুক হয়ে পড়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, শুক্রবার অনলাইনে ফ্রান্সর রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে দেওয়া বিবৃতির মতো আরও দুটি বিবৃতি ব্যাপকভাবে শেয়ার হয়েছে, সেগুলোতে একই ভাষায় ‘নাইজার যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ও জার্মানির রাষ্ট্রদূতকে দেশ ছাড়ার নির্দেশ ’দিয়েছে।
পরের দুটি নাইজারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া বিবৃতি বলে মনে হলেও সেগুলো ভুয়া বলে জানা গেছে।
শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই বিবৃতিটি তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইস্যু করেনি বলে নাইজার তাদের অবহিত করেছে।
“যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের কাছে এ ধরনের কোনো অনুরোধ জানানো হয়নি,” বলে জানিয়েছে তারা।
শুধু ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে বলে রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছেন নাইজারের এক জান্তা কর্মকর্তা ও দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর এক কর্মকর্তা।
পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ফ্রান্স বিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ পরিস্থিতির মধ্যেই বুরকিনা ফাসো ও মালির পর নাইজারেও অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করেছে।
এই অভ্যুত্থানের কারণে ফ্রান্সের সঙ্গে নাইজারের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক প্রায় ভাঙার পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। এতে আফ্রিকার সহিংসতা কবলিত সাহেল অঞ্চলে ইসলামপন্থি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যৌথ সামরিক উদ্যোগের ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত হয়ে গেছে।
নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাজৌমকে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া না হলে সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করা হবে বলে হুমকি দিয়েছে পশ্চিম আফ্রিকার আঞ্চলিক জোট ইকোওয়াস। ফ্রান্সের ইকোওয়াসের এই প্রচেষ্টায় সমর্থন জানাবে বলে জানিয়েছে।
প্রতিবেশী মালি ও বুরকিনা ফাসোতে অভ্যুত্থান পরিবর্তী পরিস্থিতি যেদিকে গড়িয়েছিল নাইজার-ফ্রান্সের সম্পর্ক দিন দিন আরও নাজুক হয়ে পড়ার মধ্যে তার প্রতিচ্ছবি পাওয়া যাচ্ছে। অভ্যুত্থানের পর সম্পর্ক নাজুক হতে হতে এক পর্যায়ে মালি ও বুরকিনা ফাসো দেশ দুটিতে মোতায়েন থাকা ফ্রান্সের বাহিনীগুলোকে বহিষ্কার করে এবং দেশটির সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিন্ন করে।