পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বেশকিছু দিন সরকারি ক্রয় কমিটির বৈঠক হয়নি। এর ফলে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি কার্যক্রমে যে সমস্যা দেখা দিয়েছিল তা কাটিয়ে উঠতে আগামী চার মাসে ২০ কার্গো এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এসব এলএনজি ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০’ এর পরিবর্তে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮ এর আওতায় আমদানি হবে। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সম্মেলন কক্ষে কমিটির আহ্বায়ক অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সভাপতিত্ব অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়। বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এটি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ক্রয় কমিটির দ্বিতীয় বৈঠক।
বৈঠকে উপস্থাপিত প্রস্তাবনা অনুযায়ী, গ্যাসের জরুরি প্রয়োজন মেটানোর জন্য পেট্রোবাংলার সঙ্গে মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (এমএসপিএ) সই করা ২৩টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮’-এর আওতায় স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন চায়া হয়।
একই সঙ্গে এর আওতায় চার মাসে ২০ কার্গো এলএনজি আমদানি করার উদ্যোগের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে চলতি মাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে ৬ কার্গো এলএনজি আমদানি করা হবে। এছাড়া অক্টোবরে ৫ কার্গো, নভেম্বরে ৫ কার্গো এবং বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ৪ কার্গো এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা নিয়েছে পেট্রোবাংলা। অবশ্য এসব এলএনজি আমদানির আগে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকেও অনুমোদন নিতে হবে।
বৈঠক শেষে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, কোনো কিছু পারচেজ করার আগে নীতিগত অনুমোদন আসে। নীতিগত অনুমোদন না থাকলে পারচেজ কমিটি (ক্রয় কমিটি) অনুমোদন দিতে পারে না।
তিনি জানান, এমএসপিএ সই করা যে ২৩টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা,২০০৮’-এর আওতায় স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো। আমরা সন্তুষ্ট হয়েছি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জি-টু-জি ভিত্তিতে পেট্রোবাংলার সঙ্গে সই করা চুক্তির আওতায় কাতারের রাস লাফ্ফান লিকুইডিফাইড নেচারাল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (কাতার গ্যাস) থেকে ১৫ বছর মেয়াদে বর্তমানে ২ দশমিক ৫ এমটিপিএ এলএনজি এবং ওমান ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল (ওকিউটি) থেকে ১০ বছর মেয়াদে বর্তমানে ১ দশমিক ০ এমটিপিএ এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। এছাড়াও গ্যাসের চাহিদার ভিত্তিতে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি করা হয়।
স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির জন্য ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০’ এর আওতায় প্রক্রিয়াকরণে সরকার ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর নীতিগত অনুমোদন দেয়। এ আইনের আওতায় স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনার লক্ষ্যে সরবরাহকারীর তালিকা প্রস্তুতের জন্য এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (ইওআই) আহ্বান করে ২০১৭ সালের ৮ জুন জাতীয় পত্রিকায়, সিপিটিইউ, পেট্রোবাংলা ও আরপিজিসিএল-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
নির্ধারিত সময়ে দাখিল করা আবেদনের মধ্যে সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত ২৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭টি প্রতিষ্ঠান এসএসপিএ অনুস্বাক্ষর করে। পরবর্তীকালে লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের ভেটিং গ্রহণ এবং অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনে পেট্রোবাংলার সঙ্গে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১৪টি প্রতিষ্ঠান এমএসপিএ সই করে।
পরবর্তীসময়ে অধিকতর প্রতিযোগিতার জন্য যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এমএসপিএ স্বাক্ষরকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৩টিতে উন্নীত করা হয়। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এখনো পর্যন্ত স্পট মার্কেট থেকে ৭৪ কার্গো এলএনজি আমদানির জন্য সর্বমোট ৯৭ বার (রি-টেন্ডারসহ) দর প্রস্তাব আহ্বান করা হলে এর বিপরীতে ২৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ১২টি প্রতিষ্ঠান দর প্রস্তাবে অংশ নেয়।