বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। গণহত্যা ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আজ (২ আগস্ট) সারাদেশে দোয়া, কবর জিয়ারত ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল কর্মসূচি পালন করবে তারা।
মসজিদে জুমার নামাজ শেষে দোয়া মোনাজাত এবং মন্দির, গির্জাসহ সব প্রার্থনালয়ে প্রার্থনার আয়োজন করা হবে। সেইসঙ্গে জুমার নামাজ শেষে শহীদদের কবর জিয়ারত ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল অনুষ্ঠিত হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল কাদের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) এ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) রাতে প্রকাশিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রিয় দেশবাসী, আপনারা সবাই অবগত আছেন যে বাংলাদেশ সরকার ও প্রশাসনের সুস্পষ্ট নির্দেশনায় পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, সোয়াট এবং সর্বশেষ সেনাবাহিনী মোতায়েন সহ সরকারদলীয় সংগঠন আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ক্যাডারদের সমন্বয়ে বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ ও আপামর জনতার উপর নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছে। আহত করা হয়েছে হাজারো বেসামরিক নাগরিককে। যেখানে যুদ্ধাবস্থাতেও আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে বেসামরিক নাগরিককে আক্রমণ করা যায় না, সেখানে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থী সহ আপামর জনতার উপর নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছে। যা সুস্পষ্টভাবে মানবাধিকারের লঙ্ঘন ও গণহত্যা। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে এই গণহত্যার বিচার করা তো দূর, নানাবিধ উপায়ে এই গণহত্যাকে জায়েজ করার চেষ্টা চালানো হয়েছে।
আহত শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে শিক্ষকরা যখন মাঠে নেমে আসে তখন তাদের ওপরও পুলিশ আঘাত হানে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর এমন ধৃষ্টতা ছাত্র সমাজসহ আপামর জনতা কখনোই মেনে নেবে না। অপ্রাপ্তবয়স্কদেরকেও রিমান্ডে নেয়ার মাধ্যমে যেই বিচারহীনতার সংস্কৃতি স্পষ্ট হয়েছে সেই বিচারহীনতার সংস্কৃতির উপর ভর করেই সরকারি গণহত্যা চালিয়েছে। গুম খুন হত্যা গণ গ্রেপ্তার এবং ভয়-ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে যে ভয় সংস্কৃতি তৈরীর অপচেষ্টা চালানো হয়েছে বাংলাদেশের আপামর জনতার সম্মিলিত প্রতিরোধে তা ধুলিস্যাৎ হয়ে গিয়েছে। দল মত নির্বিশেষে ছাত্র জনতার এই সম্মিলিত যে গণজোয়ার সেই গণজোয়ারই আমাদের আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি।
আপনারা দেখতে পেয়েছেন ছাত্র জনতার ঐক্যের ফলে আজ যেই ছয় সমন্বয়ক কে নিরাপত্তাহীনতার দোহাই দিয়ে ডিবি অফিসে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়েছিল তাদেরকে ছেড়ে দিতে সরকার বাধ্য হয়েছে। এটা স্পষ্ট করে যে, ছাত্র নাগরিকের সুস্পষ্ট ঐক্য থাকলে যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায় এবং জিতে আসা যায়। এখনো ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আক্তার হোসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আরিফ সোহেল সহ সারাদেশে হাজারো শিক্ষার্থী ও জনতাকে মিথ্যা মামলায় আটক করা হচ্ছে এবং রিমান্ডে নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
আগামীর বাংলাদেশ গড়ার কারিগর জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষকমণ্ডলীর ওপর ক্যাম্পাসের ভেতরে হামলা করেছে পুলিশের সন্ত্রাসীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শ্রদ্ধেয় শিক্ষিকা শেহরীন আমিন মোনামী ও নুসরাত জাহান চৌধুরীর গায়েও হাত তুলেছে পুলিশের কিছু কর্মকর্তা। এই ঘৃণ্য হামলার আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেই সাথে ধন্যবাদ দিচ্ছি সেই সকল শিক্ষককে যারা জাতির এই দুঃসময় শিক্ষার্থীদের পাশে এসে অভিভাবকের মত আগলে রেখেছেন, পুলিশি গ্রেপ্তার ও হামলা থেকে ঢাল হয়ে তাদেরকে রক্ষা করছেন।
আমরা স্মরণ করছি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিহত হওয়া সেই সকল শহীদদের যাদের আত্মত্যাগ আমাদের আন্দোলনকে সামনে এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা। ছাত্র জনতার এই বিপদসংকুল মুহূর্তে প্রাণভয়কে উপেক্ষা করে আন্দোলনে অংশ নেয়া সকল শহীদ, আহত, পঙ্গু ও গ্রেপ্তার হওয়া সকলের স্মরণে শুক্রবার দেশব্যাপী ‘দোয়া ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচি ঘোষণা করছি।
কর্মসূচি: গণহত্যা ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং শিক্ষার্থীদের ৯-দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে শুক্রবার সারাদেশে মসজিদে জুমার নামাজ শেষে দোয়া মোনাজাত, মন্দির, গির্জা সহ সকল প্রার্থনালয়ে প্রার্থনার আয়োজন, ও জুমার নামাজ শেষে শহীদদের কবর জিয়ারত ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল অনুষ্ঠিত হবে।
শ্রমিক, পেশাজীবী, সংস্কৃতিকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, মানবাধিকারকর্মী, বুদ্ধিজীবী, আলেম-ওলামা সহ বাংলাদেশের সর্বস্তরের নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে আগামীকালের ‘দোয়া, শহীদদের কবর জিয়ারত ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচিকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সফল করে তুলুন। মসজিদের ইমাম ও খতিবদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি আপনারা জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে চুপ থাকবেন না। মসজিদের মিম্বার থেকে প্রতিবাদের ঘোষণা দিন। মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্রদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি আপনারাই জাতির দুর্দিনের কাণ্ডারী। এই দুঃসময়ে ঘরে বসে না থেকে গণহত্যা ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং ৯-দফা দাবিতে জুমার নামাজের পর মসজিদ ও মাদ্রাসা থেকে দোয়া ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল বাস্তবায়ন করুন।