Google search engine
প্রচ্ছদজাতীয়কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে ৯ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত যা...

কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে ৯ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত যা ঘটেছে

গত ৯ জুলাই (মঙ্গলবার) হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে দুই শিক্ষার্থী আবেদন করেন। তবে শুনানি হয় পরদিন। অবশ্য ওই দুই শিক্ষার্থীর আবেদন করার সঙ্গে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এদিন আন্দোলনের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা চার ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নেন। আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে পরদিন সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়।

পরের দিন বুধবার (১০ জুলাই) সরকারি চাকরিতে সরাসরি নিয়োগে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) কোটার বিষয়ে পক্ষগুলোকে চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। শুনানির জন্য আগামী ৭ আগস্ট দিন রাখা হয়।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা সর্বোচ্চ আদালতের বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শন করছেন। এটি অনভিপ্রেত ও সম্পূর্ণ বেআইনি।

অন্যদিকে, সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, শিক্ষার্থীরা ‘লিমিট ক্রস’ করে যাচ্ছেন। এ দিন পুলিশের বাধার মুখেই দেশের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ পালন করেন আন্দোলনকারীরা।

পরেরদিন শুক্রবার (১২ জুলাই) কোটা সংস্কারের দাবিতে শুক্রবার ছুটির দিনেও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। রেলপথ অবরোধ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

শনিবার (১৩ জুলাই) সব গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দেয়ার কর্মসূচি ঘোষণা। পরের দিন রোববার গণপদযাত্রা করে রাষ্ট্রপতি বরাবর এ স্মারকলিপি দেবেন আন্দোলনকারীরা। তবে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, বিচারাধীন বিষয়ে সরকারের এখন কিছু করার নেই।

রোববার (১৪ জুলাই) গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন, কোটা বিষয়ে আমার কিছু করার নেই। মামলার পর আদালত যে রায় দেন, এতে নির্বাহী বিভাগের কিছু করার নেই। আদালতেই সমাধান করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে?

২০১৮ সালের আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জানান, সে সময়ে তিনি বিরক্ত হয়ে কোটা বাতিল করে দিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল কোটা বাতিল হলে কী হয় সেটি দেখা। এ সময় বিসিএসে নারীরা বাদ পড়েছেন, ২৩টি জেলার কেউ পুলিশে চাকরি পাননি।

একই দিনে পদযাত্রা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দিয়ে আন্দোলনকারীরা জাতীয় সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে সরকারি চাকরির সব গ্রেডের কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন।

পরে মধ্যরাতে সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের অবমাননা করা হয়েছে দাবি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করলে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। মিছিল হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও। রাত ১০টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলে বিক্ষোভের পর মধ্যরাতে শিক্ষার্থীরা জড়ো হন টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে। জমায়েতে শিক্ষার্থীরা ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’ তুমি কে আমি কে? রাজাকার-রাজাকারসহ নানা ধরনের স্লোগান দেন।

সোমবার (১৫ জুলাই) বেলা দুইটায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দুপুর দুইটায় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার’ স্লোগানের জবাব ছাত্রলীগই দেবে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আন্দোলন থেকে আত্মস্বীকৃত রাজাকার ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ মানসিকতা বা আচরণের প্রকাশ ঘটেছে। এর জবাব দেয়ার জন্য ছাত্রলীগ প্রস্তুত।

এর পরে দুপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যারা ‘আমি রাজাকার’ স্লোগান দিচ্ছেন, তাদের শেষ দেখিয়ে ছাড়বেন বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। বেলা তিনটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দফায় দফায় ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় আন্দোলনকারীদের মারধর করা হয়। গুলি করতেও দেখা যায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা হয়। আহত ২৯৭ জন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নেন। হামলার প্রতিবাদে আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগে উভয়েরই সমাবেশ করার ঘোষণা।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সারাদেশে দিনভর ব্যাপক বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ। আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সরকার সমর্থকেরা। এতে নিহত হন ছয়জন। রংপুরে আন্দোলনকারী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের বুলেটে নিহত হওয়ার সচিত্র ছবি প্রকাশ।

বিকেলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, আন্দোলন যাবে, আন্দোলন আসবে। কিন্তু ছাত্রলীগ থাকবে। সবকিছুই মনে রাখা হবে এবং জবাব দেয়া হবে। একটি ঘটনাও জবাব ছাড়া যাবে না। রাজাকারদের ফাঁদে পড়ে ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করলে ভবিষ্যতে আমরা দেখে নেব, কত ধানে কত চাল হয়।

এদিন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নতুন কর্মসূচি দেন। নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে বুধবার গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল করবেন তারা।

বুধবার (১৭ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিতাড়ন করে ‘রাজনীতিমুক্ত’ ঘোষণা। ছুটির দিনেও ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছাত্র বিক্ষোভ, সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ, গায়েবানা জানাজা, কফিন মিছিল এবং দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা। পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের মুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কফিন মিছিল পণ্ড হয়ে যায়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হল বন্ধের ঘোষণা ও পুলিশের তৎপরতার মুখে অনেক শিক্ষার্থী সন্ধ্যা নাগাদ ক্যাম্পাস ছেড়ে যান। তবে হল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে রাতেও অনেক ছাত্রছাত্রী হল ও ক্যাম্পাসে অবস্থান করছিলেন।

এদিন রাত সাড়ে সাতটায় জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় আট মিনিটের ভাষণ দেন। ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ। একই সঙ্গে তিনি আন্দোলনকারীদের সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস, আমাদের ছাত্রসমাজ উচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচারই পাবে, তাদের হতাশ হতে হবে না।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দেশব্যাপী প্রতিরোধ, সহিংসতা, সংঘর্ষ ও গুলি। মোট নিহত ২৭ জন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ সারাদেশ ছিল প্রায় অচল। রাজধানী ছাড়াও দেশের ৪৭টি জেলায় দিনভর বিক্ষোভ, অবরোধ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, পুলিশের হামলা-গুলি ও সংঘাতের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত দেড় হাজার। কোথাও কোথাও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের, আবার কোথাও সরকার-সমর্থক বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। ‘শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাব ও সোয়াটের ন্যক্কারজনক হামলা, খুনের প্রতিবাদ, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা এবং কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে’ দলে দলে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে এলে সংঘর্ষের এসব ঘটনা ঘটে। সারা দেশে বিজিবি মোতায়েন করা হয়।

শুক্রবার (১৯ জুলাই) কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ বা সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি ঘিরে রাজধানী ঢাকায় ব্যাপক সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর, গুলি, অগ্নিসংযোগ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। রাজধানী ঢাকা ছিল কার্যত অচল, পরিস্থিতি ছিল থমথমে। দেশের বিভিন্ন জেলাতেও ব্যাপক বিক্ষোভ, সংঘর্ষ ও সহিংসতা হয়।

এদিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গুলি ও সংঘর্ষে অন্তত ৪৪ জন নিহত হন। আর সারা দেশে নিহতের সংখ্যা ছিল ৫৬ জন। আহত হন শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, পুলিশ, সাংবাদিক, পথচারীসহ কয়েক শ। শুরু থেকে এ আন্দোলনে ছিলেন শুধু শিক্ষার্থীরা। তবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় লোকজনকেও অংশ নিতে দেখা যায়। আন্দোলনকারীরা জানান, ৯ দফা দাবি না মানা পর্যন্ত চলবে ‘শাটডাউন’। সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি ঘিরে গত তিন দিনে সারা দেশে নিহত হন ১০৩ জন। এর মধ্যে মঙ্গলবার নিহত হন ৬ জন, বৃহস্পতিবার ৪১ জন এবং শুক্রবার নিহত হন ৫৬ জন। রাতে সারাদেশে কারফিউ জারি, সেনাবাহিনী মোতায়েন। ইন্টারনেট সেবা সম্পূর্ণ বন্ধ।

শনিবার (২০ জুলাই) দেশজুড়ে কারফিউ, সেনা মোতায়েন। সাধারণ ছুটি ঘোষণা। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, ধাওয়া ও গুলি। উল্লেখযোগ্য স্থান হচ্ছে, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, বাড্ডা ও মিরপুর। এ ছাড়া মোহাম্মদপুরেও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে শনিবার নিহত ২৬। সব মিলিয়ে চার দিনে নিহত ১৪৮। এর মধ্যে মঙ্গলবার ৬ জন, বৃহস্পতিবার ৪১ জন, শুক্রবার ৭৫ জন এবং শনিবার ২৬ জন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কারফিউ চলবে। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে তুলে নেয়ার অভিযোগ। আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক তিন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আট দফা দাবি পেশ। কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ নম্বর মেট্রো স্টেশনে বিপুল ক্ষতি। গত শুক্রবার সরকারি তিন স্থাপনায় আগুনে ১১৩ যানবাহন পুড়ে ছাই হওয়ার খবর।

রোববার (২১ জুলাই) সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পুনর্বহাল-সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় সামগ্রিকভাবে বাতিল (রদ ও রহিত) করে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় প্রদান। রায়ে বলা হয়, কোটাপ্রথা হিসেবে মেধাভিত্তিক ৯৩ শতাংশ; মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ; ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো। তবে নির্ধারিত কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কোটার শূন্য পদগুলো সাধারণ মেধাতালিকা থেকে পূরণ করতে হবে। এই নির্দেশনার আলোকে সরকারের নির্বাহী বিভাগকে অনতিবিলম্বে প্রজ্ঞাপন জারি করতে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সর্বসম্মতিতে এ রায় দেন। রায়ে বলা হয়, এই নির্দেশনা ও আদেশ সত্ত্বেও সরকার প্রয়োজনে ও সার্বিক বিবেচনায় নির্ধারিত কোটা বাতিল, সংশোধন বা সংস্কার করতে পারবে।

এদিকে পাঁচ দিনে মৃত্যু বেড়ে হয়েছে ১৭৪। আহত কয়েকজনের মৃত্যু হওয়ায় এবং আগের মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত হওয়ার কারণে নিহতের সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার নিহত হন ৬ জন, বৃহস্পতিবার ৪১ জন, শুক্রবার ৭৫ জন, শনিবার ২৬ জন এবং রোববার ১৯ জন। এছাড়া আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদকে তুলে নিয়ে নির্যাতন। হাসপাতালে ভর্তি। চার দফা দাবি পূরণের জন্য বৈষম্যবারোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা ৪৮ ঘন্টা সময় বেঁধে দেন। চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, ইন্টারনেট সংযোগ চালু করা, শিক্ষার্থীদের আসার ব্যবস্থা করে দিয়ে হল খুলে দেয়া, আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কারফিউ তুলে দেয়া। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন চারজন সমন্বয়ক।

একই দিনে বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৫৬ সমন্বয়কের যৌথ বিবৃতি’ শিরোনামে একটি খুদে বার্তা গণমাধ্যমকর্মীদের মুঠোফোনে পাঠানো হয়। যৌথ বিবৃতিতে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ (সর্বাত্মক অবরোধ) কর্মসূচি আরও জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়। এতে বলা হয়, শুধু আদালতের রায়ের মাধ্যমে হত্যার দায় এড়াতে পারে না সরকার। বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকার সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। ‘তিন শতাধিক’ ছাত্র-জনতাকে হত্যা করার অভিযোগ করা হয়েছে বিবৃতিতে।

এছাড়া বিবৃতিতে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম সারির কয়েকজন সমন্বয়ককে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে মনগড়া বক্তব্য আদায়ের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয়েছে। এ ছাড়া সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদারসহ কয়েকজনের সন্ধান দাবি করা হয়েছে।

সোমবার (২২ জুলাই) কোটাপ্রথা সংস্কার করে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তৈরি করা প্রজ্ঞাপন অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন সংঘর্ষে আরও ১৩ জন নিহতের খোঁজ পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে পাঁচজন সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নারায়ণগঞ্জে তিনজন গত শনিবার মারা যান, যাদের লাশ উদ্ধার করা হয় সোমবার। আর রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে (মিটফোর্ড হাসপাতাল) গত শুক্রবার চারটি মরদেহ নেয়া হয়েছিল বলে সোমবার খবর পাওয়া যায়। এর বাইরে একজন পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর তথ্য এদিন জানা যায়। সব মিলিয়ে ছয় দিনে মোট ১৮৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে মঙ্গলবার ৬, বৃহস্পতিবার ৪১, শুক্রবার ৭৯, শনিবার ৩৬, রোববার ২০ ও সোমবার ৫ জন নিহত হন।

মঙ্গলবার (২৩ জুলাই)কোটাপ্রথা সংস্কার করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। মঙ্গলবার পর্যন্ত ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষে ১৯৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। মৃত্যুর এই হিসাব কিছু হাসপাতাল, মরদেহ নিয়ে আসা ব্যক্তি ও স্বজনদের সূত্রে পাওয়া। সব হাসপাতালের চিত্র পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছাত্র হৃদয় চন্দ্র তরুয়া (২২)। তিনি গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে গুলিবিদ্ধ হন।

মঙ্গলবার নতুন করে খোঁজ পাওয়া যায় আরও আটজনের মৃত্যুর। এর মধ্যে ঢাকার ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালে পাঁচজন এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুজনের মৃত্যু হয়। সাভারে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খোঁজ পাওয়া গেছে নিহত আরেক ব্যক্তির। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ১৬ জুলাই (মঙ্গলবার) ৬, বৃহস্পতিবার ৪১, শুক্রবার ৮৪, শনিবার ৩৮, রোববার ২১, সোমবার ৫ এবং মঙ্গলবার দুইজনের মৃত্যু হয়। উল্লেখ্য, গত সোম ও মঙ্গলবারের মৃত্যু চিকিৎসাধীন অবস্থায় হয়েছে।

spot_img
spot_img

এই বিভাগের আরও পড়ুন

চট্টগ্রাম

সারাদেশ

বিশেষ-সংবাদ

বিনোদন