বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (এফডিসি) শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির শপথ অনুষ্ঠান শেষে জুনিয়র শিল্পীরা সাংবাদিকদের মারধর করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ৯-১০ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় শিল্পী সমিতিকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন সাংবাদিকরা।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) রাতে গণমাধ্যমকর্মীদের একটি প্রতিনিধিদল চলচ্চিত্র সমতির ভেতরে গিয়ে উপস্থিত নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। যেখানে উপস্থিত ছিলেন শিল্পী সমিতির বর্তমান কমিটির সভাপতি মিশা সওদাগর। তিনি সাংবাদিকদের ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম মেনে নিয়েছেন। পাশাপাশি পুরো ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন।
জানা গেছে, হামলার ঘটনায় শিল্পী সমিতির সকল সংবাদ বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন সাংবাদিকরা। আমাগীকাল সকাল থেকেই এই আল্টিমেটাম কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
এদিকে হামলার শিকার সাংবাদিকদের চিকিৎসার ভার গ্রহণ করছেন চলচ্চিত্র সমিতি। যে কর্মীদের যন্ত্রাংশ এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তার জন্য ক্ষতিপূরণ দিবেন তারা।
এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এফডিসিতে শপথ গ্রহণ শেষে সমিতির অফিসে খবরের কাগজ পত্রিকার সাংবাদিক মিঠুন আল মামুন সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন ময়ূরীর মেয়ের। এ মসময় অভিনেতা শিবা শানু এই সাংবাদিককে বেরিয়ে যেতে বলেন। না যেতে চাইলে তাকে ধাক্কা দিয়ে অফিসে থেকে বের করে দেন। এসময় কয়েকজন সাংবাদিক সেখানে উপস্থিত হয়ে শিবা শানুকে থামাতে চান। তখনই শিল্পী সমিতির আরেক নেতা চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী ‘মার মার’ বলে তেড়ে যান সাংবাদিকদের দিকে। শুরু হয় সাংবাদিক ও শিল্পীদের মধ্যে তুমুল মারামারি। এরপরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পুরো এফডিসি পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। মারামারিতে রক্তাক্ত হন কয়েকজন সাংবাদিক।
আহতদের একজন খবরের কাগজের মিঠুন আল মামুন বলেন, আমি একজন শিল্পীর সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলাম। এ সময় খল অভিনেতা শিবা শানু আমাকে জিজ্ঞেস করে কেন সাক্ষাৎকার নিচ্ছি। এরপরই তিনি আমার ওপর হামলা চালান। মারধর শুরু করেন। এ সময় কয়েকজন সাংবাদিক এগিয়ে এলে জয় চৌধুরী অশ্লীল গালি দিয়ে জুনিয়র শিল্পীদের মারধর করতে নির্দেশ দেন। জয় ও শিবা শানুর নেতৃত্বেই আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে তারা।
মিঠুন বলেন, জুনিয়র শিল্পীরা যে যেভাবে পেরেছে মারধর শুরু করে। চেয়ার উঠিয়ে মেরেছে, ক্যামেরা ভাঙচুর করেছে। আমাদের ক্যামেরা পার্সনের মাথায় ৭টি সেলাই পরেছে। এমন আরো অনেকেই আহত হয়েছে। এছাড়া বাংলাভিশন ও অন্যান্য গণমাধ্যমের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত বেশ কয়েকজন সাংবাদিক হামলায় জয় চৌধুরী, শিবা শানু ও অভিনেতা আলেকজান্ডার বো-এর জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা এই তিনজন শিল্পীর বহিস্কারের দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে এ ঘটনার পরপরই এফডিসিতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আহতদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এখনও সেখানে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
উল্লেখ্য, শিল্পী সমিতির ২০২৪-২০২৬ মেয়াদের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে মিশা-ডিপজল পরিষদ। সভাপতি পদে মিশা সওদাগর পেয়েছেন ২৬৫ ভোট। নিকটতম প্রার্থী মাহমুদ কলি পেয়েছেন ১৭০ ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে মনোয়ার হোসেন ডিপজল পেয়েছেন ২২৫ ভোট। একই পদে ২০৯ ভোট পেয়েছেন নিপুণ আক্তার। মাত্র ১৭ ভোটে পরাজিত হয়েছেন গতবারের এই সাধারণ সম্পাদক।