আমদানি বাণিজ্যে রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আয় করেছে বেনাপোল স্থলবন্দর। টানা ১১ বছর ঘাটতির পর এ বছর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হয়েছে দেশের সবচেয়ে ব্যস্ত স্থলবন্দরটি। পদ্মা সেতু চালুর কারণেই এমন সফলতা এসেছে বলে দাবি কাস্টমস কর্তৃপক্ষের।
দেশে সরকার অনুমোদিত ২৪টি স্থলবন্দরের মধ্যে সচল রয়েছে মাত্র ১২টি। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আসে বেনাপোল বন্দর থেকে। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতায় গত ১১ বছর ধরে আমদানি বাণিজ্য থেকে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারছিল না কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে বন্দরে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৫৫৮ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া ২০১৯-২০, ২০১৮-১৯ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে যথাক্রমে রাজস্ব ঘাটতি ছিল ৩ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা, ১ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা ও ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
আর ২০১৫-১৬, ২০১৪-১৫, ২০১৩-১৪, ২০১২-১৩ ও ২০১১-১২ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দরে যথাক্রমে ২০৩ কোটি টাকা, ৮ কোটি ৭১ লাখ, ১৩৪ কোটি ৭৩ লাখ, ৪৫২ কোটি ৮৯ লাখ ও ১৯৪ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি ছিল।
তবে পেছনের সেই ব্যর্থতা ঘুচে ১১ বছরের রেকর্ড ভেঙে চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে বন্দরটি থেকে সরকারের রাজস্ব এসেছে ৫ হাজার ৩৬০ কোটি ৭৮ কোটি টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১ হাজার ২২৫ কোটি ২০ লাখ টাকা বেশি।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু চালুর কারণেই এসেছে এমন সফলতা। বেনাপোল কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার সাফায়েত হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু বেনাপোল বন্দরের সাফল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। গত বছরের তুলনায় রাজস্ব আয়ের পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়েছে।
এদিকে পদ্মা সেতুর কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় ব্যবসায়ীরা যশোরের বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দরমুখী হচ্ছেন। পুরানো রেকর্ড ভেঙে আমদানি, রফতানিও বেড়েছে এ বন্দর দিয়ে।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ১৮ লাখ ৮১ হাজার ৪১৯ দশমিক ০৩ মেট্রিক টন পণ্য। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৯ হাজার ৫৫২ মেট্রিক টন বেশি।
আর ভারতে রফতানি হয়েছে ৯ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকারও বেশি পণ্য। যার পরিমাণ ৪ লাখ ৫২ হাজার ৩১০ দশমিক শূন্য ৭ মেট্রিক টন। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩২ হাজার মেট্রিক টন বেশি।
বন্দরের আমদানি-রফতানি পণ্য বহনকারী ট্রাকচালকরা জানান, পদ্মা সেতুর সুফল পাচ্ছি। পণ্য আনা নেয়া সহজ হয়েছে।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ সিঅ্যান্ডএফ ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সামসুর রহমান বলেন, এই বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমদানিকারকরা বেনাপোলমুখী হচ্ছেন।
আর বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট বিষয়ক সম্পাদক সুলতান আহম্মেদ বিপুল বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় আমদানি-রফতানি বাণিজ্য অনেক সহজ হয়েছে। এখন বেনাপোল থেকে পণ্য নিয়ে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছানো যায়।
এদিকে বন্দরের আমদানি-রফতানি ও রাজস্ব বাড়ার ধারাবাহিক সফলতা আরও বাড়াতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নের উপর জোর দেয়ার কথা জানান বেনাপোল স্থলবন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আব্দুল জলিল।
তিনি বলেন, বেনাপোল বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ চলছে। খুব শিগগিরই বন্দরটি আরও আধুনিক বন্দরে পরিণত হবে।
উল্লেখ্য, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দর থেকে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা।