গবেষণাসহ নানা প্রয়োজনে দীর্ঘ দুই বছর ১০ মাস পর সমুদ্র সৈকতে পুঁতে রাখা বিরল প্রজাতির তিমির কঙ্কাল তোলা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারী) দুপুরে কক্সবাজারের পেঁচারদ্বীপস্থ বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফী রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (বুরি) সম্মেলন কক্ষে বুরির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. তৈহিদা রশীদের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব তথ্য জানানো হয়।
বুরির সম্মেলন কক্ষে বুরির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. তৈহিদা রশীদ সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ২০২১ সালের ২১ এপ্রিল সৈকতের হিমছড়ি অংশে বিরাট মৃত তিমিটি ভেসে আসে। সেসময় তিমিটি সৈকতের বালিয়াড়িতে পুঁতে ফেলা হয়। সমুদ্র সম্পর্কিত সকল তথ্য বা মানুষকে সমুদ্রের প্রতি আগ্রহী করে তোলা, প্রদর্শনী, সমুদ্র সম্পর্কিত গবেষণা কার্যক্রমসহ বিভিন্ন কারণে কঙ্কালটি সংগ্রহ করার কার্যক্রম শুরু করে বুরি। পুঁতে রাখা জায়গাটি নির্ধারণ করে বালিয়াড়ির ২০ ফুট গভীরে পাঁচ দিন ধরে খুুঁড়ে সংগ্রহ করা হয় এ তিমিটির কঙ্কাল।
বুরির মহাপরিচালক বলেন, ভেসে আসা তিমিটির ওজন ছিল প্রায় ৯ মেট্রিক টন, দৈর্ঘ্য ৪৬ ফুট ও প্রস্থ ১৬ ফুট। পৃথিবীতে ৭৯ থেকে ৮৪ প্রজাতির তিমি রয়েছে যার মধ্যে ব্রাইডস তিমির প্রজাতি ৩ থেকে ৪টি পাওয়া যায়, যারা ইন্দো-পেসিফিক সমুদ্র অঞ্চলে বিচরণ করে। প্রাপ্ত তিমিটি ব্রাইডস প্রজাতির যার বৈজ্ঞানিক নাম বেলিনিওপটেরা ইডিনি (Balaenoptera edeni)। জেলা প্রশাসক এবং বন বিভাগের সহায়তায় তখন তিমিটিকে প্রায় ১০ ফুট নিচে মাটি চাপা দেয়া হয়।
তিনি বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অনুরোধে ইনস্টিটিউটকে তিমির কঙ্কাল সংগ্রহ ও গবেষণার জন্য তিমিটি বরাদ্দ দেওয়া হয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে গত ২২ জানুয়ারি তিমিটির কঙ্কাল উত্তোলন করার কার্যক্রম শুরু করা হয়। ২৩ জানুয়ারি তিমির আশেপাশের সম্পূর্ণ বালি অপসারণ করে তিমির কঙ্কাল উত্তোলন করা সম্ভব হয়। ইতোমধ্যে তিমিটির বেশিরভাগ অংশ উত্তোলন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবারের মধ্যে তিমির কঙ্কাল উত্তোলনের কাজ সম্পন্ন হবে। কঙ্কাল উত্তোলনে অংশগ্রহণ করেন, আবু সাঈদ মুহাম্মদ শরীফ, সিনিয়র সাইন্টিফিক অফিসার মো. জাকারিয়া, সিনিয়র সাইন্টিফিক অফিসার মো. হানিফ বিশ্বাস, সাইন্টিফিক অফিসার এবং বিওআরআই এর অন্যান্য সহযোগী কর্মচারীগণ।
তিনি আরও বলেন, তিমিটির কঙ্কাল উত্তোলনের পর সেগুলো প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ এবং রিএসেম্বলিং করার জন্য বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা এবং বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কারিগরি টিম গঠন করা হয়েছে। সার্বিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তিমি বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণার জন্য কঙ্কালটি বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসে স্থাপন করা হবে। পরবর্তীতে বিওআরআই এর আওতায় মেরিন অ্যাকুরিয়াম স্থাপন কার্যক্রম শুরু হলে সেখানে কঙ্কালটি হস্তান্তর করা হবে। আমরা আশা প্রকাশ করছি, সমুদ্রকে জানতে ও বুঝতে এটি মানুষের মধ্যে আগ্রহের সঞ্চার করবে এবং পাশাপাশি সমুদ্রের জীব বৈচিত্র্য নিয়ে গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করতে এই কার্যক্রমটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।