এগিয়ে চলেছে ‘জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯’– এর কার্যক্রম। সারা দেশের মতো চট্টগ্রামের মানুষের কাছেও নির্ভরতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে ৯৯৯। অসুস্থ রোগীর জন্য অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, জঙ্গি আস্তানার সন্ধান, অগ্নিকাণ্ডসহ যে কোনো দুর্ঘটনা, বাড়িতে ডাকাতের হানা, ধর্ষকের কবল থেকে বাঁচার আকুতি, প্রতারকের প্রলোভন, ইভটিজিংয়ের প্রতিকার–সব সমস্যার সমাধান যেন ৯৯৯।
৯৯৯–এ ফোন করে ঝামেলা এড়িয়ে সহজে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন জরুরি সেবা পাচ্ছে মানুষ। প্রতিদিন গড়ে পঁচিশ হাজার নাগরিক কল করছে এই জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯–এ।
জাতীয় জরুরি সেবা–৯৯৯ এর তথ্যমতে ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর উদ্বোধনের পর থেকে গতবছর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ সর্বমোট ৫,১৮,৫৩,১৭৫ টি কল রিসিভ করে। যার মধ্যে ২,১৯,৯৬,২৭১ টি কলের বিপরীতে সেবা প্রদান করা হয়। এই কলসমূহের মধ্যে ১৫,৭৫,৫২৩ টি জরুরি কলে সাড়া দিয়ে পুলিশ, ফায়ার এবং এ্যাম্বুলেন্স জরুরি সেবা প্রদানে সরাসরি ঘটনাস্থলে গিয়ে সেবা প্রদান করে। এর মধ্যে ১৩,০১,০৭৫ টি কলের বিপরীতে জরুরি পুলিশি সেবা, ১,৩২,১৭২ টি কলের বিপরীতে জরুরি ফায়ার সার্ভিস সেবা এবং ১,৪২,২৭৬ টি কলের বিপরীতে জরুরি অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করা হয়।
গত বছর চট্টগ্রাম নগরী ও জেলা থেকে ৯৯৯ এ ১৫ হাজার ৯০০ কল করা হয়। এরমধ্যে মারামারি সংক্রান্ত কল সবচেয়ে বেশি। ৭৩১২টি কল করা হয় এ সংক্রান্ত। এরপরে জমিজমা বিরোধ সংক্রান্ত কল রয়েছে ২৮০১টি, নারীর প্রতি সহিংসতা সংক্রান্ত কল ২০৩২টি, দুর্ঘটনাজনিত কল ১৯৫৪টি এবং অগ্নিকাণ্ড সংক্রান্ত কল ১৮০১টি।
জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯–এর গণমাধ্যম ও জনসংযোগ কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার সাত্তার বলেন, অভ্যন্তরীণ নানা সংকট মোকাবেলা করে আমরা সেবা দিয়ে চলেছি পাবলিককে। তবে আশার কথা হলো এটিকে একটি স্বতন্ত্র ইউনিট করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এটি হলে আমরা আরও বেশি সেবা দিতে পারবো। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্সের জন্য যাত্রা শুরু করে ৯৯৯। কিন্তু এই জাতীয় জরুরি সেবা–৯৯৯ এখন দেশের মানুষের কাছে অনেক জনপ্রিয়।
পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার সাত্তার বলেন, চট্টগ্রামসহ সারা দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি কল আসে নারী নির্যাতন সংক্রান্ত। যেখানে যৌন হয়রানি থেকে বাল্য বিবাহ, ইভটিজিং পর্যন্ত সবই আছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা, জায়গা–জমি সংক্রান্ত বিরোধ, অগ্নিকাণ্ড ইত্যাদি। আছে আত্মহত্যা সংক্রান্ত ঘটনাও।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, কেউ একজন ঘুমের ওষুধ খেয়ে ৯৯৯–এ ফোন করে জানান যে তিনি আত্মহত্যা করতে চলেছেন। তখন দ্রুত পুলিশ টিম গিয়ে তাকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। আবার বাড়ির কোনো সদস্য এ কাজ করলে অন্য সদস্যদের কেউ আমাদের কল দিয়ে জানায়। এরকম অসংখ্য ঘটনায় আমরা ভিকটিমকে শেষ মুহূর্তে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে সমস্যা সংক্রান্ত কল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলে কিংবা গহীন কোন স্থন বা পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে পথ হারিয়ে ফেলা ট্যুরিস্টদের উদ্ধার সংক্রান্ত বিষয়ে ৯৯৯ কার্যকর ভূমিকা রেখে চলেছে। উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ইঞ্জিন বিকল হয়ে মিয়ানমার জলসীমায় জেলেসহ আটকে পড়ে একটি মাছ ধরার ট্রলার। ৯৯৯ নম্বরে ফোনকল পেয়ে মিয়ানমার নৌবাহিনীর হেফাজত থেকে ১৫ জন জেলেদের উদ্ধার করা হয় গত ১৫ জানুয়ারি। এর আগে ৩ জানুয়ারি আনোয়ারার গহিরা উপকূল থেকে মা–মণি নামে একটি মাছ ধরার ট্রলার নিয়ে তারা সাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। গত বছর ৫ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটি বেড়াতে এসে কাপ্তাই হ্রদে জেগে ওঠা টিলায় আটকে পড়ে চট্টগ্রাম কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের একটি লঞ্চ। সাড়ে তিন ঘণ্টা পর ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে এই ১৭৫ জন পর্যটককে উদ্ধার করা হয়। একই বছর ১১ মে ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে খৈয়াছড়া ঝর্ণায় ঘুরতে এসে পাঁচ বন্ধু দিক ভুল করে হারিয়ে যান বনের গভীরে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এলে কোনো উপায়ান্তর না দেখে ফোন দেন জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ। পরে প্রায় দুই ঘণ্টারও বেশি চেষ্টায় ওই পাঁচ বন্ধুকে উদ্ধার করে পুলিশ।