উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ে শঙ্কার কথা জানালেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও। তবে তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন বলেও জানান তিনি। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ে আমরাও শঙ্কিত। সারা বিশ্বেই এখন উচ্চ মূল্যস্ফীতি। তবে আমরা খাবার তো বন্ধ করতে পারব না। একটা নমনীয় পথে এগোচ্ছি। যেসব কারণে এটি (মূল্যস্ফীতি) হয়, তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। প্রয়োজন অনুযায়ী ছাড়ও দিচ্ছি।’
জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের পরদিন শুক্রবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বাজেট–পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীর ডানে ছিলেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিন ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শরিফা খান।
আর অর্থমন্ত্রীর বাঁ পাশে ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী (এলজিআরডি) মো. তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম ও পরিকল্পনাসচিব সত্যজিৎ কর্মকার।
সূচনা বক্তব্যে প্রস্তাবিত বাজেট দেশের মানুষের কল্যাণে ব্যবহৃত হবে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী। বলেন, ‘বাজেটে দেওয়া প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবায়ন হচ্ছে, গত পাঁচ বছর ধরেই তা জানিয়ে আসছি। আমরা ব্যর্থ হইনি। ভবিষ্যতেও ব্যর্থ হব না।’ এরপরই অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের কাছ থেকে প্রশ্ন চান।
অর্থমন্ত্রী কোনো প্রশ্নের জবাব নিজে দেন, কোনোটির জবাব দিতে ঠেলে দেন অন্য মন্ত্রী ও আমলাদের। কোনো প্রশ্নের জবাব অর্থমন্ত্রী তো দেননি, অন্যরাও এড়িয়ে যান, অন্য বিষয়ে কথা বলেন। অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে প্রশ্ন করা হলেও কেউ কেউ নিজ দায়িত্বে জবাব দেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ বেশির ভাগ প্রশ্নের জবাব দেওয়ার দায়িত্ব পান গভর্নর।
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন, ইআরডি সচিব শরিফা খান ও পরিকল্পনাসচিব সত্যজিৎ কর্মকার কোনো প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সুযোগ পাননি।
এবারের বাজেট সবার জন্যই উপহার দিয়েছি—এমন মন্তব্য করে সাংবাদিকদের উদ্দেশে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মধ্যম মানের আয় করা অনেকেই কর দেন না, আপনারাই এ কথা বলতেন। সময় এসেছে তাঁদের কাছ থেকে কর আদায়ের। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফও বলেছে, কর দেওয়ার মতো ব্যক্তিদের কাছ থেকে যেন কর আদায় করা হয়।’
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রেসক্রিপশনে বাজেট করেননি বলে মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী। বলেন, ‘আইএমএফ শুধু ঋণ দেয় না, পরামর্শও দেয়। অর্থনৈতিক বিভিন্ন সংস্কারে সহায়তা করে। তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার থাকে। তাদের পরামর্শের যেটুকু গ্রহণ করা যায়, সেটুকুই নেওয়া হয়। সেখানে আমাদের কোনো আপত্তি থাকে না। আইএমএফ থেকে যতটুকু ঋণ নিয়েছি, তা মাত্র দেড় মাসের প্রবাসী আয়ের সমান।’
মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সারা বিশ্বের দিকে তাকানোর পরামর্শ দেন সাংবাদিকদের। তিনি এ-ও বলেন, টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি নিম্ন আয়ের পরিবারের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে তেল, চিনি বিক্রি করা হচ্ছে। যদিও নিত্যপণ্যের দামে কোথাও কোথাও মধ্যস্বত্বভোগীরা সুযোগ নিচ্ছে।
বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৯ থেকে ৬ শতাংশে ও ডলারের দাম ১০৮ থেকে ১০৪ টাকায় নামিয়ে আনার স্বপ্ন দেখিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। রিজার্ভ, প্রবাসী আয় ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির কথাও বলেছেন। কীভাবে—এমন প্রশ্নের জবাব দিতে অর্থমন্ত্রী দায়িত্ব দেন গভর্নরকে। গভর্নর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ১৮ জুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে। কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা মুদ্রানীতিতে থাকবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরবরাহ ব্যবস্থায় কোনো প্রতিবন্ধকতা নেওয়া হয়নি। সুদ ও বকেয়া পরিশোধে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। ফলে মূল্যস্ফীতিতে কোনো প্রভাব পড়বে না। চাহিদা কমানোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় বেশ কিছু পদক্ষেপ নেবে।
আব্দুর রউফ তালুকদার আরও বলেন, ‘আগামী মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ে কিছু বিষয় থাকবে, যাতে উঠে আসবে প্রত্যাশিত মূল্যস্ফীতির বিষয়টি। ১০ বছর আগে রিজার্ভ ছিল এক হাজার কোটি ডলার। এখন যে রিজার্ভ, দিয়ে তা দিয়ে পাঁচ মাসের আমদানি দায় মেটানো যাবে। আমরা চাইছি আর্থিক হিসাব ঋণাত্মক থেকে ভালো করার। এ জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে কয়েক মাসের মধ্যে রিজার্ভ বাড়তে শুরু করবে।’