রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোরও সংস্কার জরুরি উল্লেখ করে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যদি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং গণতান্ত্রিক জোট না থাকে, তাহলে তাদের মধ্যে ক্ষমতার লোভ পেয়ে বসবে। কাজেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রসারিত করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার করার প্রয়োজন আছে।
গতকাল শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদ আয়োজিত ‘ভারতীয় আগ্রাসন ও আধিপত্য বিরোধী’ শীর্ষক জাতীয় যুব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ ঘোষণা দেন তিনি।
নুরুল হক নুর বলেন, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনে সমস্ত রাজনৈতিক দল, শিল্পী, সাহিত্যিক সবার প্রত্যাশা ছিল নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করার জন্য আন্দোলনের অংশীজনদেরকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। রাষ্ট্র সংস্কার করা হবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা দেখলাম, যাদের আমরা সরকার গঠনের দায়িত্ব দিলাম, তারা তাদের বন্ধুবান্ধব এবং লোকজনকে নিয়ে সরকার গঠন করলেন। আন্দোলনে থাকা নেতারা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মনে আঘাত দিলেন।
তিনি আরও বলেন, অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দিকে গোটা জাতি তাকিয়ে আছে। কিন্তু দুঃখজনক হলো, সরকার জাতির মনের আশা-আকাঙ্ক্ষা বুঝতে পারছে না।রাজনৈতিক দলগুলো এখন সরকারের কর্মকাণ্ডে সন্দেহ-সংশয় প্রকাশ করছে। এ সরকারের প্রতি আমাদের ক্ষোভ আছে, রাগ আছে। প্রয়োজনে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করব। আমাদের দাবি আদায়ে বাধ্য করব। এ সরকারের জনগণের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। জনগণের বাইরে গেলে, জনসমর্থনের বাইরে গেলে এক সপ্তাহও টিকে থাকতে পারবে না তারা।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি বলেন, আজ বাংলাদেশে যে সংকট তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে শেখ হাসিনার পতনের পর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সংকট তৈরি হয়েছে, আমরা মনে করি এই সংকটের জন্য ভারত দায়ী। সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট বার্তা ছিল এবং রাজনৈতিক দলগুলো বলেছে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে কূটনৈতিক সম্পর্ক সেটি স্বাভাবিকভাবেই চলবে। কিন্তু, বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের গণমাধ্যম, তাদের আন্তর্জাতিক মানের নেতারা এবং নাগরিক সমাজ সংঘবদ্ধভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা বলছে, বাংলাদেশে নাকি সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন এবং নিপীড়ন চালানো হচ্ছে, যা একেবারেই ভিত্তিহীন এবং অসত্য।
তিনি আরও বলেন, আমরা ভারতসহ সব বিদেশি মিডিয়াকে আমন্ত্রণ জানাব; আপনারা বাংলাদেশে এসে গ্রামগঞ্জে ঘুরে দেখুন কোথায় হিন্দুদের ওপর আক্রমণ হয়েছে, কোথায় মন্দিরে আক্রমণ হয়েছে। যে দু’একটি ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো রাজনৈতিকভাবে নয়, আওয়ামী লীগ হয়ে যারা হিন্দু কিংবা মুসলমানদের ওপরে নির্যাতন চালিয়েছে, জনরোষে ও জনক্ষোভে তাদের নামে মামলা হচ্ছে। কোথাও বিচ্ছিন্ন হামলা-মামলার ঘটনা ঘটছে। এটি কোনো সামগ্রিক ঘটনা নয়। কাজেই আমরা ভারতের মিডিয়াসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে বলব বিষয়টি সঠিকভাবে আপনারা তুলে ধরবেন।
ডাকসুর সাবেক ভিপি নুর বলেন, বাংলাদেশে আজ সমগ্র রাজনৈতিক দল দাবি জানিয়েছে, বিগত ১৬ বছরে শেখ হাসিনার আমলে ভারতের সঙ্গে যেসব অন্যায্য এবং দেশবিরোধী চুক্তি হয়েছে তা জনসম্মুখে প্রকাশ করা। একইসঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা সেটি ভারতকে জানিয়ে দেওয়া। ভারত যদি আমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চায়, বন্ধুত্ব করতে চায়, সেই সম্পর্ক হবে দু’দেশের মানুষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে।