আগামী সাত দিনের মধ্যে দুদকের নতুন চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ও আয়–ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।
গতকাল বুধবার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এসে নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের আয় ও সম্পদের হিসাব প্রকাশের টিআইবির আহ্বান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আবদুল মোমেন এ কথা বলেন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নবনিযুক্ত কমিশনের সম্পদবিবরণী প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, সাতদিনের মধ্যে নতুন কমিশনের স্থাবর-অস্থাবর আয়ব্যয়ের হিসাব আপনারা পেয়ে যাবেন।
বিমানের এমডি থাকাকালীন আপনার বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ ছিল- এক সাংবাদিকের এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দুদকে এসেছে ২০০৯ সালে। বহু তদন্ত হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ২০২৩ সালে দুদক ক্লিনচিট দিয়েছে। যে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে ন্যায়নিষ্ঠভাবে আপনারাও দেখবেন।
এদিন বিকেল ৩টার পরে আবদুল মোমেন রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে গেলে সংস্থার অন্য কর্মকর্তারা তাকে অভ্যর্থনা জানান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন নতুন দুদক কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী।
দায়িত্ব গ্রহণের পর দুদক প্রাঙ্গণে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে ন্যায়নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাব। দুর্নীতি একেবারে নির্মূল করতে পারব, সেই প্রতিশ্রুতি দেয়া ঠিক হবে না। আমরা যেন সাধ্যমতো কাজ করতে পারি, সেটা দেখতে হবে। আমরা আইন মেনে ন্যায়নিষ্ঠভাবে কাজ করব।
দুদকের নতুন চেয়ারম্যান আরও বলেন, যেসব বিষয়ে বড় ধরনের দুর্নীতি হছে, এতে রাষ্ট্র বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যারা এ কাজগুলো করেছেন, তারা যেন শেষ পর্যন্ত ছাড় না পান, সে কাজটা আমরা সঠিকভাবে ও ন্যায়পরায়ণভাবে করে যাব।
তিনি বলেন, আমরা যে বাংলাদেশে এসেছি, সেই বাংলাদেশের নবজন্ম ৫ আগস্টে হয়েছে। ৫ আগস্টের বাংলাদেশের প্রত্যাশা এবং এর পরবর্তী বাংলাদেশের প্রত্যাশা এক নয়। যে আন্দোলন থেকে বাংলাদেশের সৃষ্টি, সেটি বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ। ৫ আগস্টের পরবর্তী বাংলাদেশে আমরাও বৈষম্যের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখার অঙ্গীকার রেখে কাজ শুরু করেছি। আপনাদের ও আমাদের ভূমিকা একই।
রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে ন্যায়নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে তিনি বলেন, দুর্নীতি একেবারে নির্মূল করতে পারব, সেই প্রতিশ্রুতি দেওয়া ঠিক হবে না। আমরা যেন সাধ্যমতো কাজ করতে পারি, সেটা দেখতে হবে। ন্যায়নিষ্ঠভাবে আমরা আইন মেনে কাজ করব।
নিজের রাজনৈতিক পরিচয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি তিনটি রাজনৈতিক সরকার ও দুটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে কাজ করেছি। এই অন্তর্বর্তী সরকারের অন্য রাজনৈতিক দলের মতো কোনো রাজনৈতিক চরিত্র নেই। রাজনৈতিক চাওয়া নেই। এ সরকারের চাওয়া হচ্ছে জনগণকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। এখানে রাজনৈতিক সরকার প্রভাবিত করবে না। আমরাও প্রভাবমুক্ত থেকে ন্যায়নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাব।
মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে দুদকের চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনারের নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য জানানো হয়। নিয়োগকৃতদের মধ্যে চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের বেতনভাতা, অন্যান্য সুবিধা ও পদমর্যাদা সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারকের এবং কমিশনার মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহ্সান ফরিদের বেতনভাতা, অন্যান্য সুবিধা ও পদমর্যাদা সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারকের সমরূপ হিসাবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
২৯ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ এবং কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক ও কমিশনার (অনুসন্ধান) মোছা. আছিয়া খাতুন পদত্যাগ করেন। তারা আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নিয়োগ পেয়েছিলেন।