আওয়ামী লীগ আমলের সংসদ নির্বাচন এবং দলটিকে নিয়ে হাইকোর্টে দুটি রিট করেছেন দুই সমন্বয়ক। সোমবার সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম পৃথক এসব রিট দায়ের করেন। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বিভ্রান্তিও তৈরি হয়। প্রকৃতপক্ষে রিট করা হয়েছে আওয়ামী লীগ আমলে অনুষ্ঠিত তিনটি নির্বাচন নিয়ে। আর এই রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আরেকটি রিট করা হয়।
এ বিষয়ে সোমবার একই বক্তব্য আলাদাভাবে ফেইসবুকে পোস্ট করে বিষয়টি স্পষ্ট করেন দুই সমন্বয়ক। সেখানে বলা হয়, দুটি রিট করেছি। আওয়ামী লীগের বিগত তিনটি নির্বাচনকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং অবৈধভাবে প্রাপ্ত সুবিধাগুলো কেন ফিরিয়ে দেবে না সে বিষয়ে প্রথম রিট। এই মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত কেন তাদেরকে পলিটিক্যাল সকল একটিভিটি থেকে বিরত রাখা হবে না সে বিষয়ে দ্বিতীয় রিট।
দল হিসেবে নিষিদ্ধ কিংবা নিবন্ধন নিষিদ্ধের কোনো কথা রিটে নেই বলেও উল্লেখ করেন হাসনাত আবদুল্লাহ। একই কন্টেন্ট পোস্ট করেন সারজিস আলমও।
তাদের আইনজীবী আহসানুল করিম সোমবার বলেছেন, বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি সিকদার মো. মাহমুদুর রাজীর বেঞ্চে মঙ্গলবার এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে।
আওয়ামী লীগের আমলের ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত তিনটি নির্বাচনই ছিল বিতর্কিত। সবশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচন নিয়ে বেশি বিতর্ক হয়। খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বিদায়ের প্রাক্কালে ওই নির্বাচন বিতর্কিত এবং কমিশনের সীমাবদ্ধতা ছিল বলে স্বীকার করেন।
গত ৫ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনে সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার সময় কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছে। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে ব্যক্তির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে, দলের সঙ্গে নয়। সম্প্রতি ভেঙে দেওয়া সংসদের ২৯৯টি আসনে নির্বাচন প্রার্থীদের মধ্যে ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে হয়েছে, দলের মধ্যে নয়।
তিনি বলেন, ২৯৯ আসনে এক হাজার ৯৬৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। ২০২৪ সালে একদলীয় নির্বাচন হওয়ার কারণে কারচুপি বা সরকারিভাবে প্রভাবিত করার প্রয়োজনও ছিল না। নির্বাচন এক দলের ভেতরেই হয়েছে। বহু দলের মধ্যে হয়নি। ভোটের পর বিজয়ী পেয়েছি। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে বর্তমান কমিশনের অধীনে। ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ২৮টি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও প্রধানতম বিরোধী দল বিএনপি ও সমমনা দলগুলো সেই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে। নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়নি।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে ‘সন্ত্রাসী সত্তা’ হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে গত ২৩ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ১৫ বছর দেশ শাসন করা আওয়ামী লীগকেও নিষিদ্ধের দাবি রয়েছে সরকার পতনের আন্দোলনে অংশ নেওয়া কোনো কোনো পক্ষের।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্র-জনতাকে ‘নির্বিচারে হত্যার’ অভিযোগে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল এবং ক্ষমতাচ্যুত দলটির ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে গত অগাস্ট মাসে একটি রিট আবেদন করা হয়েছিল। ‘সারডা সোসাইটি’ নামের একটি মানবাধিকার সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক আরিফুর ওই আবেদন করেছিলেন।
গত ১ সেপ্টেম্বর শুনানি শেষে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন হাই কোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ সেটি খারিজ করে দেয়। অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সে সময় শুনানিতে বলেছিলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত নেই রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের। সংবিধানে রাজনৈতিক দল পরিচালনার যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তা খর্ব করবে না সরকার। বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের অনেক অন্যায়-অবিচারের শিকার হয়েছে মানুষ। অনেক গুম-খুন হয়েছে। সেগুলোর বিচারের জন্য আইন ও আদালত রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের অনেক ভালো নেতাকর্মীও রয়েছেন, তারা দলের মতাদর্শ ধারণ করেন। এজন্য দল নিষিদ্ধ করার সুযোগ নেই। তাদের রাজনৈতিক অধিকার খর্ব করার ইচ্ছা এ সরকারের নেই।
সে সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আর আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে আমি না, যদি না কোনো জঙ্গিবাদী কিংবা রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতায় তারা লিপ্ত থাকে। সত্যিকার অর্থে যদি কোনো রাজনৈতিক দল জঙ্গিবাদী কিংবা রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতায় জড়িত থাকে, তাহলে প্রচণ্ড সততার সঙ্গে তদন্ত করে এমন কিছু (নিষিদ্ধ) করা যেতে পারে।
আওয়ামী লীগের বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বর্বরতম ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল আওয়ামী লীগ। এই কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যক্তিগত দায় থাকতে পারে, নেতাদের সামষ্টিক দায় থাকতে পারে, কিন্তু দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সমীচীন হবে বলে আমি মনে করি না।