Google search engine
প্রচ্ছদচট্টগ্রামচট্টগ্রামে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সমাবেশ, ঢাকা অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণা

চট্টগ্রামে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সমাবেশ, ঢাকা অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণা

চট্টগ্রাম নগরের লালদীঘি মাঠে ৮ দফা দাবিতে গণসমাবেশ করেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংগঠন বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ।

শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) বিকেলে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে বিভাগ, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে সমাবেশ শেষে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণা দেয়া হয়।

বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বলেন, সনাতনীদের এ দেশ থেকে উৎখাতের চেষ্টা হলে পরিণতি ভয়াবহ হবে। যে মঞ্চ থেকে স্বাধীনতার ৬ দফা দাবি উঠেছিল, সেই মাঠে বাংলাদেশে সব মঠ মিশনের সাধুরা সমবেত হয়েছেন সনাতনীদের দাবি আদায়ে। সনাতনীদের ওপর যতই নিপীড়ন হবে, আমরা তত বেশি ঐক্যবদ্ধ হব। দাবি আদায়ে বিভাগ ও জেলায় সমাবেশ শেষে আমরা ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ করব।

৮ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার, সংখ্যালঘু কমিশন সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন এবং দুর্গাপূজায় পাঁচ দিন ছুটি।

শুক্রবার বেলা আড়াইটার পর থেকে চট্টগ্রাম নগর এবং বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে লোকজন সমাবেশে আসতে শুরু করেন। তিনটার মধ্যে লালদীঘি মাঠ ভরে যায়। আশপাশেও ছড়িয়ে পড়েন মানুষ। বকশিবিট থেকে শুরু করে, কে সি দে রোড, জেল রোড, লালদীঘির চারপাশ ও কোতোয়ালি মোড় পর্যন্ত লোকে-লোকারণ্য হয়ে পড়ে। সমাবেশে যোগদানকারীদের হাতে ছিল বিভিন্ন স্লোগানের ব্যানার–ফেস্টুন।

আমার মাটি আমার মা, এ দেশ ছেড়ে কোথাও যাব না’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে হাজার হাজার নারী-পুরুষ মিছিল করে এই সমাবেশে যোগ দেন।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী আরও বলেন, ‘কেউ যদি আমাদের উৎখাত করে শান্তিতে থাকার চেষ্টা করেন, তাহলে এ ভূমি আফগানিস্তান হবে, সিরিয়া হবে। সাম্প্রদায়িক আচরণ করে বাংলাদেশের কোনো গণতান্ত্রিক শক্তি রাজনীতি করার সুযোগ পাবে না। ক্ষমতার পটপরিবর্তন হচ্ছে বারবার, এ দেশে স্থিতিশীলতা আসছে না। কারণ সহনশীলতা লুপ্ত হচ্ছে। সম্মানবোধ হারিয়ে যাচ্ছে, শিক্ষককে পদত্যাগ করানো হচ্ছে। শুধু সংখ্যালঘু পরিচয়ে ৯৩ জনকে পুলিশের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ভেটেরিনারি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দুদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। মাঝখানে কিছুদিন এমন অপকর্ম থেমে গিয়েছিল। এখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। আমরা আর নীরব থাকব না।’

তিনি আরও বলেন, ‘কেউ যদি রাজনৈতিক দুর্বৃত্তপনায় জড়িত থাকে, তাদের আসামি করুন, বিরোধিতা করব না। কিন্তু বেছে বেছে মামলায় আসামি করা হচ্ছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল চারটি মূল নীতিতে। আমাদের দলীয় পরিচয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয়। হিন্দুদের অস্তিত্বের কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না। আমরা গণতন্ত্রের নামে প্রহসনকে মেনে নেব না। আমরা সংখ্যানুপাতিক হারে সংসদে আসন চাই।’

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বলেন, ‘বাংলাদেশে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে— আমাদের আপত্তি নাই। কিন্তু দ্বিতীয়–তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে সংবিধান সংশোধনকে মানব না। পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি হিন্দু হয়েছেন। আর এ দেশে একজনকে করে ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছেন। জে এম সেন হলে মামলায় আসামিদের জামিন হয়ে গেল। আমাদের ধর্মের অনুভূতিতে আঘাত হানলে জামিন পায়। আর হিন্দুধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতির কথা বলে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘এটা সুশৃঙ্খল আন্দোলন, রাজনৈতিক আন্দোলন না। আজকের সমাবেশে নানা প্রোপাগান্ডা করা হয়েছে। আমাদের সমাবেশকে রাজনৈতিক ট্যাগ দেয়ার চেষ্টা করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ দেশের জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ রয়েছি এখনো, নিঃশেষিত হয়নি। এলাকায় এলাকায় এক–একটা যুব গোষ্ঠী গড়ে তুলুন। আমাদের দেবালয় আমরা পাহারা দেব।’

সমাবেশে কৈবল্যধাম আশ্রমের মহারাজ কালিপদ ভট্টাচার্য বলেন, সনাতনী সমাবেশ যাতে উজ্জীবিত হয়, এ জন্য ঐক্যবদ্ধ হন। সনাতনী সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন ৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে।

গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারীর সঞ্চালনায় গণসমাবেশে আরও বক্তব্য দেন শংকর মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ তপনানন্দ গিরি মহারাজ, ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী, বাঁশখালী ঋষিধামের মোহন্ত সচিদানন্দ পুরী মহারাজ, কৈবল্যধামের মহারাজ কালিপদ ভট্টাচার্য, স্বামী গোপীনাথ মহারাজ প্রমুখ।

spot_img
spot_img

এই বিভাগের আরও পড়ুন

চট্টগ্রাম

সারাদেশ

বিশেষ-সংবাদ

বিনোদন