ভারত ছাড়া আরও ৯টি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি পেয়েছেন আমদানিকারকেরা। ১৯ আগস্ট ভারত পেঁয়াজ রফতানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্কারোপের পর দেশের ব্যবসায়িরা বিকল্প বাজার থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য সরকারের কাছে অনুমতি চান। তাতে সাড়া দিয়ে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয় সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)। সরকারি এই সংস্থার সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আমদানিকারকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোট ১৩ লাখ ৭৩ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর বিপরীতে দেশে এসেছে ৩ লাখ ৭৯ হাজার টন পেঁয়াজ।
যেসব দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য ব্যবসায়িরা অনুমতি পেয়েছেন তার মধ্যে আছে চীন, মিসর, পাকিস্তান, কাতার, তুরস্ক, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। আমদানিকারকেরা বলছেন, সরকারের এই পদক্ষেপের ফলে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির নির্ভরতা কমবে।
ডিএই সূত্রে জানা গেছে, চীন থেকে ২ হাজার ৪০০ টন, মিসর থেকে ৩ হাজার ৯১০ টন, পাকিস্তান থেকে ১১ হাজার ৮২০ টন, কাতার থেকে ১ হাজার ১০০ টন, তুরস্ক থেকে ২ হাজার ১১০ টন, মিয়ানমার থেকে ২০০ টন, থাইল্যান্ড থেকে ৩৩ টন, নেদারল্যান্ডস থেকে ৪ টন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৩ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ডিএইর একজন কর্মকর্তা বলেন, ব্যবসায়িরা চাইলে যেকোনো দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে পারেন। কোনো পণ্য আমদানির অনুমতি দেওয়া হলে, সেখানে পণ্যের ধরন সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা থাকে। তবে কোন দেশ থেকে আমদানি করা হবে, তা উল্লেখ করে কোনো শর্ত দেওয়া থাকে না। ব্যবসায়ীরা তাঁদের সুবিধামতো দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি চেয়েছেন। সেভাবেই নিয়মিতভাবে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, সরকার চলতি বছরের ৫ জুন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া শুরু করে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যেসব পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে, তার অধিকাংশই এসেছে ভারত থেকে। পেঁয়াজ রপ্তানিতে প্রতিবেশী দেশটির নতুন নীতির কারণে এখন বিকল্প উৎস থেকে পেঁয়াজ আমদানির আগ্রহ দেখাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। সরকারও চাইছে বাজার স্থিতিশীলতার স্বার্থে অন্য দেশ থেকেও পেঁয়াজ আসুক।
গত সোমবার পেঁয়াজের ওপর থেকে আমদানি শুল্ক ও অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)। সংস্থাটির পক্ষ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ও বাণিজ্যসচিব বরাবর এ–সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়।
চিঠিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ ও মূল্যে স্থিতিশীলতা আনার জন্য পেঁয়াজ আমদানিতে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক ও ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়।
বিটিটিসির চিঠিতে বিকল্প উৎস থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রস্তুতি নেওয়ার জন্যও অনুরোধ জানানো হয়েছিল। এর আগেও বাজারের অস্থিরতা কমাতে ভারত ছাড়া তুরস্ক, মিসর ও মিয়ানমার থেকে দেশে পেঁয়াজ এসেছে।
বিটিটিসির হিসাবে, দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৫ লাখ টনের মতো। বর্তমানে খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৯০ থেকে ৯৫ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।