Google search engine
প্রচ্ছদজাতীয়বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে চান প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে চান প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার চায় বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক।তিনি বলেন, “বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অগ্নি সন্ত্রাসের মতো মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলা করেও আমরা উন্নয়নের পথে দেশের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে চাই।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নবনির্মিত ১৫ তলাবিশিষ্ট ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন’ (বিটিআরসি) ভবন ও ১৩ তলা বিশিষ্ট ‘তথ্য কমিশন ভবন’ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে আজ একথা বলেন।

এছাড়া তিনি তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে একইসঙ্গে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন’ (বিএফডিসি) কমপ্লেক্সেরও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
এই দেশটাকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলাই তাঁর সরকারের লক্ষ্য এবং এই মাসেই জাতির পিতাকে হারানোর বিয়োগান্তক অধ্যায় স্মরণ করে সরকার প্রধান বলেন, জাতির পিতার তৈরি করে দেয়া ভিত্তি বা শুরু করে যাওয়া প্রতিটি কাজ সফলভাবে করতে পেরে আমি দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

তিনি বলেন, জনগণ আমাদের বার বার নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন বলেই এই কাজগুলো আমরা করতে পেরেছি। বাংলাদেশে ২০০৯ সাল থেকে আজকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক পদ্ধতির সরকার চলছে, দেশে স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে। যদিও এর মাঝে আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ এবং অগ্নিসন্ত্রাস-এমন অনেক কিছুই মোকাবিলা করতে হয়েছে। কিন্তু তারপরেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে সেটাই আমরা চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি এবং ২০৪১ সালের মধ্যে এই বাংলাদেশকে আমরা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সেখানে আমাদের স্মার্ট জনগোষ্ঠী হবে, স্মার্ট ইকোনমি হবে, স্মার্ট সোসাইটি হবে, স্মার্ট গভর্ণমেন্ট তথা প্রতিটি ক্ষেত্রই স্মার্ট হবে।

তিনি আরো বলেন, সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই তাঁর সরকার সকল ক্ষেত্রেই আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন জনগোষ্ঠী, সমাজ এবং দেশকে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছে ।
তিনি বলেন,“ইনশাল্লাহ আমরা এটা সফলভাবে করতে পারবো। বাংলাদেশে কোন ক্ষুধা-দারিদ্র্য থাকবেনা, কোন মানুষ কষ্ট পাবেনা, প্রত্যেক ভূমিহীন মানুষ ঘর পাবে, প্রতিটি মানুষের জীবন মান উন্নত হবে।”

তিনি তাঁর সরকারের চালু করা সর্বজনীন পেনশন স্কিমের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আগে অবসর ভাতা কেবল সরকারি কর্মকর্তারাই পেত, সেটাকে আমরা এখন সর্বজনীন করে দিয়েছি। কেননা যখন তাদের (অবসরে যাওয়া বেসরকারি কর্মজীবী) কাজ করার সুযোগ থাকবে না তখন তাদের জীবনটা যেন অর্থবহ থাকে এবং প্রত্যেক মানুষের জীবনটা যেন নিরাপদ হয়।

বিএফডিসি কমপ্লেক্সের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পাশাপাশি এক একর জমিতে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন বিটিআরসি ভবন এবং ০.৩৫ একর জমিতে তথ্য কমিশন ভবন উদ্বোধনের পর তিনি বলেন, আমরা যখনই কোনো উন্নয়নের উদ্যোগ নিই, তখনই দেখতে পাই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ভিত্তি প্রদান করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ভিত্তির ওপর নির্ভর করেই আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার পদচিহ্ন অনুসরণ করে বাংলাদেশ ও এর জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে পেরে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত বোধ করছেন।
অনুষ্ঠানে বিটিআরসি ভবন, তথ্য কমিশন ভবন এবং বিএফডিসি কমপ্লেক্স (তেজগাঁও) সংযুক্ত ছিল।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

অনুষ্ঠানে নবনির্মিত বিটিআরসি ও তথ্য কমিশন ভবন এবং বিএফডিসি কমপ্লেক্সের ওপর একটি অডিও-ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিতে তাঁর সরকারের প্রচেষ্টার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তথ্য চাওয়া এবং তথ্য পাওয়া মানুষের অধিকার। সেই অধিকার আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি এবং এখন মানুষ কোন তথ্য চাইলে তা পেতে পারে।

তিনি বলেন,“আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে। আওয়ামী লীগের কোন রাখঢাক (গোপনীয়) কিছু নেই। কোন তথ্য ফাঁস হয়ে যাবে সেই চিন্তা আমাদের নেই। আমরা যা করবো সম্পূর্ণ ভাবে জনগণকে জানিয়ে জনগণের সাথে সম্পৃক্ত থেকেই করবো। জনগণের কল্যাণ করাটাই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য এবং সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি”।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর নবম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে ‘তথ্য অধিকার আইন’ পাস করে এবং এর আওতায় ‘তথ্য কমিশন’ গঠন করে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেয় এবং কমিশনের নিজস্ব ভবন নির্মাণের পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার বেরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দেয়ায় দেশে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অবারিত সুযোগ সৃষ্টি হয়-এমন অভিমত ব্যক্ত করে তিনি বলেন,আমরাই বাংলাদেশ টেলিভিশন, বিটিভি ওয়ার্ল্ড এবং সংসদ টেলিভিশনের পাশাপাশি ৪৪টি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল, ২২টি এফএম রেডিও এবং ৩২টি কমিউনিটি রেডিও, ১৪টি আইপি টিভিসহ অসংখ্য সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টালের অনুমোদন দিয়েছি। আমরা সাংবাদিকদের কল্যাণে ‘বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট’ প্রতিষ্ঠা করেছি। জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা-২০১৭, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা-২০১৪ সহ বিভিন্ন আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ আমরা টেলিডেনসিটি ১০৪ শতাংশে উন্নীত করেছি। দেশে এখন মোবাইল গ্রাহক ১৮ কোটির উপরে। ১৭ কোটি মানুষ কিন্তু সীম ব্যবহার হচ্ছে ১৮ কোটির উপরে। মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে এমন গ্রাহকের সংখ্যা ১২ কোটি ৭০ লাখ।

সরকার মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সকল টিভি চ্যানেল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ব্যবহার করছে। সাবমেরিন ক্যাবল কক্সবাজারে এবং কুয়াকাটায় সংযুক্ত করা হয়েছে এবং আরো একটি সংযোগের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বর্তমানে বিটিআরসি’র ব্যান্ডউইথ চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) এর পাশাপাশি আরও তিনটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সাবমেরিন ক্যাবলে সংযুক্তির লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। সারাদেশে অপটিক্যাল ফাইবার বিস্তৃত হয়েছে ১ লক্ষ ৬০ হাজার ৩৪৮ কিলোমিটার।

তিনি যোগ করেন, বিএনপি আমলে ১৯৯১ ও ১৯৯৪ সালে দুই দুই বার বিনা খরচে সাবমেরিন ক্যাবলে সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। অথচ তথ্য ফাঁস হয়ে যাবে এই অজুহাতে তারা এই সুযোগ প্রত্যাখ্যান করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১১ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভের পাশাপাশি ১২ বছরে বিটিআরসি শুধু তরঙ্গ বরাদ্দ দিয়ে রাজস্ব আয় করেছে ৪ দশমিক ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি।

তিনি বলেন, তাঁর সরকার ৮ হাজার ৮৪৩টি ডিজিটাল সেন্টার এবং ৮ হাজার ৫০০টি পোস্ট ই-সেন্টার স্থাপন করেছে। ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত অপটিক্যাল ফাইবার সম্প্রসারণ করা হয়েছে।

এছাড়া সরকার ৩৫ হাজার ২৫৬টি ওয়েবসাইট সম্বলিত বিশ্বের বৃহত্তম ওয়েব পোর্টাল ‘তথ্য বাতায়ন’ চালু করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় ১৯৫৬ সালে মন্ত্রী থাকাকালীন জাতির পিতার হাতেই এদেশে চলচ্চিত্র শিল্পের গোড়াপত্তন হয়েছে উল্লেখ করে জানান, তাঁর মায়েরও এতে ভূমিকা ছিল। সে সময় এদেশে কোলকাতা ভিত্তিক বাংলা ছবির প্রদর্শনী হোত। একটি ছায়াছবি দেখে রিকশাযোগে ফেরার পথে তাঁর মা (বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব) বাবার কাছে কথা তুলেছিলেন, বাংলাদেশেও কি এমন চলচ্চিত্র নির্মাণ করা যায় না? পরবর্তীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ১৯৫৭ সালের ৩রা এপ্রিল তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদে এক বিল উত্থাপনের মাধ্যমে এফডিসি প্রতিষ্ঠা করেন। জাতির পিতা গাজীপুরে ফিল্মসিটির জন্য জায়গাও বরাদ্দ দিয়ে গিয়েছিলেন।

স্বাধীনতা পূর্ব সময়ে এফডিসি নির্মিত ‘কখনো আসেনি’, ‘কাঁচের দেয়াল’, ‘জীবন থেকে নেওয়া’র মতো জীবনমুখী চলচ্চিত্রগুলো, জহির রায়হান নির্মিত কালজয়ী চলচিচত্র ‘স্টপ জেনোসাইড’, ‘ওরা ১১ জন’ সহ মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্রগুলো আমাদের দেশেই নির্মিত হয়েছে বলেও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর ২০১২ সালের ৩ এপ্রিল গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চলচ্চিত্রকে ‘শিল্প’ হিসেবে তাঁর সরকার ঘোষণা দেয়।

সরকার ‘চলচ্চিত্র সংসদ নিবন্ধন আইন ২০১১’, ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (সংশোধন) আইন-২০১৯’ প্রণয়ন করেছে। প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট’। অসচ্ছল শিল্পী ও কলাকুশলীদের আর্থিক সহায়তার লক্ষ্যে ‘শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট’ গঠন করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, পাশাপাশি সিনেমা হল মালিকদের দীর্ঘমেয়াদী ও স্বল্পমেয়াদী ব্যাংক ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য সরকারি অনুদান বৃদ্ধি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রণীত হয়েছে চলচ্চিত্র নীতিমালা।

তিনি জানান, ‘বিএফডিসি কমপ্লেক্স নির্মাণ’ প্রকল্পের কাজ ২০২৪ সালে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। হাতিরঝিল প্রকল্পের নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যরে সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রকল্পটির ভূমি ব্যবহার করা হচ্ছে। কমপ্লেক্সের বিভিন্ন ফ্লোরে সবধরনের আধুনিক সুযোগ সুবিধা রাখা হয়েছে যাতে একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা একটি পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র নির্মাণ করে তা প্রদর্শন করার সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন।

spot_img
spot_img

এই বিভাগের আরও পড়ুন

চট্টগ্রাম

সারাদেশ

বিশেষ-সংবাদ

বিনোদন