আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে সংবিধান না মেনে খুনি মোস্তাক নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে। রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেই জিয়াউর রহমানকে বানালো সেনাপ্রধান। ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জিয়াউর রহমান ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ আগস্ট বাঙালির জাতীয় জীবনে সবচেয়ে একটি কলঙ্কময় অধ্যায়। বাংলাদেশের ইতিহাস সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছিল এই ১৫ আগস্ট। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বাঙালির জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। একই সঙ্গে আমার মা, আমার তিন ভাই, কামাল-জামালের বউদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইতিহাসের এ জঘন্য ঘটনা বাংলার মাটিতে ঘটে যায়। সেই কারবালার ঘটনাকেও যেন হার মানায়। কারবালার ঘটনা শিশু-নারীদের হত্যা করা হয়নি, কিন্তু ১৫ আগস্ট শিশু-নারীদেরও তারা ছাড়েনি। আমি আর আমার ছোট বোন রেহানা মাত্র ১৫ দিন আগে ৩০ জুলাই জার্মানির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে ৩১ জুলাই আমরা সেখানে পৌঁছাই।
তিনি বলেন, আমরা ভাবতেও পারিনি আমাদের জীবনে এমন একটা আঘাত অপেক্ষা করছে। ১৩ তারিখে আব্বার সঙ্গে, মায়ের সঙ্গে, সবার সঙ্গে কথা হয়। ১৫ তারিখে এ ঘটনা ঘটার পর যখন আমরা জানতে পারি, তখন সব তথ্য আমরা জানতে পারিনি।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমার আপনজন হারিয়েছি, স্বজন হারিয়েছি, বিদেশে রিফিউজি হিসেবে থাকতে হয়েছে। আমরা যারা আপনজন হারিয়েছি, আমারও তো হারিয়েছি, সবচেয়ে বড় প্রশ্ন বাংলাদেশের মানুষ কী হারিয়েছিল?
বুধবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগের আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা আমাদের বাড়িতে সব সময় ওঠা-বসা, খাওয়া-দাওয়া করেছে, তারা বেইমানি করেছে। তারাই বেইমানি করেছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। মীর জাফর যখন বেইমানি করে তিন মাসও ক্ষমতা থাকতে পারেনি। দুই মাসের মাথায় তাকে চলে যেতে হয়েছিল। একই ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেছে।
সরকার প্রধান বলেন, মোস্তাককে বিদায় আর জিয়াউর রহমান নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতায় বসে। আরেক দিকে সেনাপ্রধান আবার রাষ্ট্রপতি। সংবিধান লঙ্ঘন করে, সেনা আইন লঙ্ঘন করে।
তিনি বলেন, আমার বাবা সারাটা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন এদেশে মানুষের জন্য। মানুষের কথাই বেশি ভাবতেন। তিনিতো ভালোবেসে ছিলেন মানুষকে। এদেশে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করবেন। তাদের সুখী জীবন দেবেন। অন্য, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার ব্যবস্থা করে তাদের উন্নত জীবন দেবে। সেটাইতো তার জীবনের একমাত্র সাধন, সংগ্রাম। কাজে তিনি নিজের জীবনকে সেভাবে উৎসর্গ করে গেছেন। বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলেছেন।
আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্যে রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য তারানা হালিম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির, উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি প্রমুখ।