বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক ২০২৪ প্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করেছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। দেশসেরা ২১ বরণ্যে ব্যক্তিদের মধ্যে স্থান পেয়েছেন চট্টগ্রামের পাঁচ সন্তান।
শিল্পকলা, ভাষা, সমাজসেবা ও শিক্ষা এই চার ক্যাটাগরিতে এই পাঁচজনকে মনোনীত করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম থেকে এবার তালিকায় রয়েছেন শিল্পকলায় (সঙ্গীত) বীর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণী ঘোষ, ভাষা ও সাহিত্যে মিনার মনসুর, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও আর্কাইভিংয়ে কাওসার চৌধুরী, শিক্ষায় প্রফেসর ড. জিনবোধি ভিক্ষু এবং সমাজসেবায় বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন মমতার প্রতিষ্ঠাতা লায়ন রফিক আহমেদ।
আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে এই পদক।
মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আইরীন ফারজানা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে পদকপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করা হয়।
চট্টগ্রামের পাঁচ সন্তানের পদকপ্রাপ্তির বিষয়ে চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বাবু বলেন, ‘বাংলাদেশের শিক্ষা, সাহিত্য, সংগীত ও সমাজসেবায় যে চট্টগ্রাম একটি বড় অংশজুড়ে আছে তা এই পাঁচ সন্তানের পদক প্রাপ্তিতে আরও একবার প্রমাণিত হলো। এর আগে দু-একজন পদক পেলেও এবারই সর্বপ্রথম একসঙ্গে পাঁচজন একুশে পদক পেলেন। যার মাধ্যমে চট্টগ্রামের শিল্প, সাহিত্যের মানুষরা আরও বেশি অনুপ্রাণিত হবে। যা আপামর বাংলাদেশের সংস্কৃতির ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করবে।’
পদকপ্রাপ্তদের পরিচয়
শিল্পকলা (সঙ্গীত) ক্যাটাগরিতে মনোনীত হলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ‘পূর্ব দিগন্তে, সূর্য উঠেছে’ গানের শিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণী ঘোষ।
কল্যাণী ঘোষের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার বিনাজুরিতে। ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’, ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’সহ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনেক গানের শিল্পী তিনি। সংগীতশিল্পী প্রবাল চৌধুরী, উমা খান ও কল্যাণী ঘোষ আপন ভাই-বোন। একসময় বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে নিয়মিত গান করতেন।
একই ক্যাটাগরির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও আর্কাইভিংয়ে পদক পাচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ইউনিয়নের সন্তান কাওসার চৌধুরী। জন্ম কক্সবাজার হলেও কাওসার চৌধুরীর বেড়েওঠা হয়েছে ঢাকাতেই। মুক্তিযুদ্ধ ও সমাজ সংস্কার বিষয়ক একাধিক স্বল্প দৈর্ঘ্যর চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তিনি।
সমাজসেবা ক্যাটাগরিতে পদক পাচ্ছেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘মমতা’র প্রতিষ্ঠাতা লায়ন রফিক আহমেদ। চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরের এই সন্তান এনজিও মমতা ছাড়াও মমতা হাসপাতাল, কালচারাল একাডেমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ একাধিক সামাজিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক, সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য পুরস্কৃত হচ্ছেন।
ভাষা ও সাহিত্যে একুশে পদক পাচ্ছেন মিনার মনসুর। তিনি চট্টগ্রামের পটিয়ার বড়লিয়া গ্রামের সন্তান। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক তিনি। ‘এই অবরুদ্ধ মানচিত্রে’, ‘অনন্তের দিনরাত্রি’, ‘অবিনশ্বর মানুষ’সহ একাধিক কাব্যগ্রন্থ, প্রবন্ধ বই রয়েছে তার। এবারের বই মেলাতেও মিনাল মনসুরের একাধিক বই প্রকাশিত হয়েছে।
শিক্ষা ক্যাটাগরিতে পদক পাচ্ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. জিনবোধি ভিক্ষু। আনোয়ারায় ‘আন্তর্জাতিক নবপণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপনের উদ্যোক্তা তিনি।
চট্টগ্রামের এই পাঁচজন ছাড়াও এবার ভাষা আন্দোলন ক্যাটাগরিতে মরণোত্তর একুশে পদক পেয়েছেন মৌ. আশরাফুদ্দীন আহমদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হাতেম আলী মিয়া (মরণোত্তর)।
শিল্পকলার সংগীতে পেয়েছেন জালাল উদ্দীন খাঁ (মরণোত্তর), বিদিত লাল দাস (মরণোত্তর), এন্ড্রু কিশোর (মরণোত্তর) ও শুভ্র দেব। অভিনয়ে ডলি জহর ও এমএ আলমগীর; আবৃতিতে খান মো. মুস্তাফা ওয়ালীদ (শিমুল মুস্তাফা) ও রূপা চক্রবর্তী; নৃত্যকলায় শিবলী মোহাম্মদ, চিত্রকলায় শাহজাহান আহমেদ বিকাশ এবং সমাজসেবায় মো. জিয়াউল হক।
একুশে পদকপ্রাপ্ত সবাইকে ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের তৈরি ৩৫ গ্রাম ওজনের একটি করে পদক, চার লাখ টাকা ও একটি সম্মাননা পত্র দেওয়া হবে।